Home Uncategorized হাওড়ার অমরাগড়ী গ্ৰামে রায় পরিবারের তিন শতাব্দী প্রাচীন দূর্গোৎসব ‌

হাওড়ার অমরাগড়ী গ্ৰামে রায় পরিবারের তিন শতাব্দী প্রাচীন দূর্গোৎসব ‌

0

অভিজিৎ হাজরা,আমতা : গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার আমতা বিধান সভার আমতা ২নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত অমরাগড়ী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অমরাগড়ী গ্ৰামে রায় পরিবারের তিন শতাব্দী প্রাচীন দূর্গোৎসব সম্পর্কে জানার আগে এই পরিবারের শ্রী শ্রী ঁ গজলক্ষী মাতা স্টেট সম্পর্কে জানা দরকার। এই প্রসঙ্গে এই এস্টেটের বর্তমান সম্পাদক সৌরভ রায় বলেন, “এই এস্টেটটি গঠিত হয়েছিল বাংলার ১১২৬ বঙ্গাব্দের ১৫ ই বৈশাখ। বতর্মানে ৩০৫ বছরে পদার্পণ করেছে এই স্টেটটি। এই স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্বর্গীয় শান্তি রায়।শান্তি রায় বাণিজ্য করতে বেড়িয়ে এই গ্ৰামে রাত্রী যাপনের জন্য নৌকার নোঙর বাঁধেন। সেই রাত্রে মা ঁ গজলক্ষী দেবী স্বর্গীয় শান্তি রায় কে স্বপ্না দেশ দিয়ে বলেন,” আমাকে ছেড়ে চলে যাস না – তুই আমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর!” সেই স্বপ্না দেশ পেয়ে তিনি অমরাগড়ী গ্ৰামে বসবাস শুরু করেন।গ্ৰামবাসীদের নিয়ে গড়ে তোলেন শ্রী শ্রী ঁ গজলক্ষী মাতা এস্টেট। তিনি বাইরে থেকে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষজনদের এনে এই গ্ৰামে বসবাস করান এবং গ্ৰামটিকে একটি আদর্শ গ্ৰামে রূপান্তরিত করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই এস্টেট একই নিয়মে চলে আসছে। এই স্টেটেটের বিভিন্ন পূজার্চনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১ লা বৈশাখ,রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী,রাসযাত্রা,দশহারা, শিবরাত্রির পূজা,মকর সংক্রান্তি,চাঁচড়,দোল উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি, ঝাঁপ ও গাজন উৎসব। এছাড়াও নিত্যসেবা,শ্রী শ্রী ঁ গজলক্ষী মাতা দেবী ও তিনটি শিব মন্দিরের পূজা এখনও চলে আসছে। সেই সঙ্গে বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব মহাপূজা দূর্গাপূজা চলে আসছে ধারাবাহিক ভাবে। এই স্টেটের বর্তমান সভাপতি নিশিথ রায়, সম্পাদক সৌরভ রায়, কোষাধ্যক্ষ তনয় রায় সহ চোদ্দো জন সদস্য – সদস্যা বৃন্দের দ্বারা দূর্গা পূজা সহ অন্যান্য উৎসব পরিচালিত হচ্ছে। অমরাগড়ী গ্ৰামের শ্রী শ্রী ঁ গজলক্ষী মাতা এস্টেটের দূর্গাপূজা এই বছর ৩০৫ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।এই পূজার বৈশিষ্ট্য একচালা প্রতিমা, চামুণ্ডা মূর্তি, মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে পূজা শুরু হয়ে যায়। দেবীর চন্ডীপাঠ, নিত্যদিনের সন্ধ্যারতির মাধ্যমে প্রতিপদের দিন থেকে পরিবারের দূর্গোৎসব পূর্ণমাত্রা এনে দেয়। কথিত আছে প্রায় ১৮২ বৎসর আগে এই পূজায় মহিষ বলি হত। বতর্মানে বলি বন্ধ।কারণ ১৮২ বৎসর আগে এই অমরাগড়ী এলাকাটি জল – জঙ্গল,পশুজন্তুদের বাসস্থান।শোনা যায়,এক বৎসর দূর্গা পূজার সন্ধিপূজার সময় ছিল রাত্রে।কামার মহিষ বলি দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রাত্রে বেরিয়ে ছিল। রাস্তায় কামারকে হঠাৎ বাঘে ঘেরে।কামার বাঘের ভয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য সামনের একটি গাছে উঠে পড়ে। অনেকক্ষণ কামার গাছে বসে আছে। এদিকে সন্ধিক্ষণের সন্ধিপূজার বলির সময় এগিয়ে আসছে।বাঘ গাছের নিচে থেকে সরছে না। এদিকে পূজা মন্ডপে সন্ধিপূজার ঘন্টা পড়ছে।তখন ও বাঘ গাছের নিচে থেকে সরছে না।তখন কামার উপায় না দেখে দেবীর নাম স্মরণ করে গাছ থেকে লাফ দিলে বাঘের ঘাড়ের উপর পড়ে। কামারের হাতে থাকা কাতানের আঘাতে বাঘের মন্ডুচ্ছেদ হয় ও সন্ধিপূজার ও বলি ওখানেই সমাপন ঘটে। সেই রাত্রে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন,” কিরে আমার বাহনকে মেরে ফেললি ? তোরা বলি বন্ধ কর ” । সেই থেকেই বলি বন্ধ হয়ে গেছে। এই পূজার পঞ্চমীর দিন বাড়ির মেয়ে, গৃহবধূরা প্রায় ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টি নারকেল নাড়ু তৈরি করেন। সপ্তমীর দিন নব পত্রিকাকে পালকির মত দুলিয়ে দুলিয়ে মন্ডপে প্রবেশ করানো হয়। অষ্টমীর দিন একই সময়ে সন্ধিপূজা,হোম,ধূনোপোড়া,আরতি,১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। পূজার নবমীর দিন সন্ধ্যেবেলায় লুচি ও দানাদার ভোগ সবাইকে বিতরণ করা হয়। এই পূজার আর ও একটি বৈশিষ্ট্য এই দূর্গা প্রতিমা দশমীর দিন দুপুর ১২ টার পর বিসর্জন হয়। এর কারণ ১৫২ বছর আগে এই রায় পরিবারের এক সদস্য দশমীর দিন দুপুর ১২ টার সময় মারা যান। সেই থেকেই অমরাগড়ী রায় পরিবারের দূর্গা প্রতিমা দুপুর ১২ টার পর বিসর্জন হয়ে আসছে। এই দূর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয় মন্দিরের পাশের প্রতিষ্ঠা করা পুকুরে। অমরাগড়ী গ্ৰামে একটিই দূর্গাপূজা।এটি এখন আর রায় পরিবারের পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।গ্ৰামের সবাই এসে প্রত্যহ পূজা দেন। পূজা মন্ডপে এসে ভিড় জমায়।একে অপরের খোঁজ খবর নেন। উৎসব মন্ডপকে মিলনস্থলে রুপ দেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version