Home Lifestyle সুন্দরবনের দিনমজুরের ছেলে মহাদেব চিকিৎসক হয়ে সেবা করতে চায়

সুন্দরবনের দিনমজুরের ছেলে মহাদেব চিকিৎসক হয়ে সেবা করতে চায়

0

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি : সুন্দরবনের দিনমজুরের ছেলে মহাদেব চিকিৎসক হতে চায়। নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারের সন্তান রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে এবারের মাধ্যমিকে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। প্রত্যাশা পূরণ ও করেছে সে।নিজের,পরিবার ও স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।উজ্জ্বল করেছে গ্রামের মানুষের মুখ।সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের চার নম্বর মধুসূদনপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সুজিত হালদার ও তার স্ত্রী কাঞ্চন হালদারের পুত্র মহাদেব হালদার ছোটবেলা থেকেই গ্রামের জুনিয়র স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর কুলতলি ব্লকের জামতলা ভগবান চন্দ্র হাই স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়।ছোট থেকে একটানা দশম শ্রেণী পর্যন্ত ফাস্ট বয় হিসাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছে মহাদেব।তিন সন্তান ও দম্পতির সংসার চালানোই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুজিত বাবুর।তাই হাড় ভাঙা কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জন করেও সন্তানদের পড়াশোনা খরচ মেটাতে পারছিলেন না তাই বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা বেলায় বাড়িতে গৃহ শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন বছর দুয়েক আগে থেকে।আর সেই অতিরিক্ত উপার্জনেই সুজিত বাবু পড়াশোনার খরচ মেটাতেন মহাদেবের।স্ত্রী কাঞ্চনদেবীও স্বামীর ওপর ভার কমাতে সংসার সামলানোর পাশাপাশি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর রাধুনী হিসাবে কাজ করেন।আর এইভাবেই কোন রকমে জোড়া তালি দিয়ে চলে আসছে তাদের অভাবের সংসার।আর সেই পরিবারের সুসন্তান দিনে ও রাতে গড়ে পাঁচ ঘন্টা মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করেই নজর করা সাফল্য এনেছে তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণায়।বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৮১,অংক ৯১, ভৌত বিজ্ঞান ৯১, জীবন বিজ্ঞান ৯৭,ইতিহাস ৯০ ও ভূগোলে ৯৯।তাঁর প্রাপ্ত নম্বর হলো ৬৪৪।শতকরা হিসাবে ৯২% নম্বর।এই নম্বর প্রাপ্তির ফলেই একদিকে যেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়েছে।সেই সঙ্গে আশায় বুক বেঁধেছে হালদার পরিবার।বাড়ির গৃহকর্তা সুজিত হালদার অশ্রু সজল চোখে শুক্রবার বলেন,’সারা জীবন কষ্ট করেই চলেছি।তবে কোনো কিছুতেই হাল ছাড়িনি।সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি যাতে সন্তানরা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে।তবে মহাদেব বরাবরই মেধাবী ছিল।তাই ওর ওপরে আমাদের প্রত্যাশাও ছিল বেশি।অন্য অভিভাবকদের মতন বেশি গৃহ শিক্ষক তাকে দিতে পারিনি।একটি মাত্র কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দিয়েছিলাম গ্রামে।আমাদের আর্থিক দুরাবস্থার জন্য কোচিং সেন্টারে একজন শিক্ষক আবার বিনা বেতনেও তাকে সারা বছর ধরে পড়িয়েছেন।তাই আজকের আমাদের সবার সেই সম্মিলিত লড়াই সার্থক হয়েছে।আমরা চাই ও মানুষের মত মানুষ হোক।মানুষের কল্যাণ করুক।’আর যার সাফল্যে এতকিছু সেই মহাদেব হালদার এদিন জানায়,’বাবা ও মা আমার জন্য যা করেছে তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই।ভগবান চন্দ্র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ঘোষাল সহ অন্যান্য সহ শিক্ষক,শিক্ষিকা,কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা আমাকে যেভাবে গাইড করেছে তার ফলেই আজকে এই সাফল্য আমি পেয়েছি।আমি সুন্দরবনের দিনমজুরের সন্তান। এখানকার মানুষের দুঃখ যন্ত্রণা আমি বুঝি।চিকিৎসার জন্য বারুইপুর,কলকাতায় দৌড়াতে হয়।তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে আগামী দিনে চিকিৎসক হয়ে কুলতলির মানুষের সেবা করতে চাই।’প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রেরএই নজর কারা সাফল্যে গর্বিত স্কুলের শিক্ষকমন্ডলী।মহাদেবের এই সাফল্যে খুব খুশি কুলতলির মানুষ।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version