Home General সাধুবেশে সক্রিয় অসাধুরা নেতাজির চরিত্রহনণে

সাধুবেশে সক্রিয় অসাধুরা নেতাজির চরিত্রহনণে

0

নিজস্ব প্রতিনিধি: নেতাজির ১২৫তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে এবছর মোদী সরকার একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটিতে জনৈকা বিদেশিনী অ্যানিটা পাফকে নেতাজি কন্যা বলে উল্লেখ করা হয়। বাংলার বহু নেতাজি অনুরাগী মানুষের এখানেই আপত্তি। নেতাজি কমিটিতে উল্লেখযোগ্য কোনও নেতাজি গবেষক ঠাঁই না পেলেও বহু রাজনীতির মানুষজন আছেন। তাঁদের দাবি অবিলম্বে অ্যানিটার নাম প্রধানমন্ত্রীর ওই হাই পাওয়ার কমিটি থেকে সরাতে হবে। এই নিয়ে তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাসট্যাগ আন্দোলন শুরু করেছে। ওই হাই পাওয়ার কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের নেতাজি গবেষক আশরাফুল ইসলাম এদেশের নেতাজি অনুরাগীদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
গবেষকদের দাবি যে, সরকারের প্রকাশিত গোপন নেতাজি ফাইলে দেখা গেছে স্বরাষ্ট্র দফতর নেতাজির তথাকথিত স্ত্রী কন্যার গল্পকে মান্যতা দেয়নি। প্রকাশিত অ্যানিটা পাফের জন্মের শংসাপত্রেও সুভাষচন্দ্রের নাম কোথাও নেই। নেতাজির নিজস্ব ঘোষণাতেও স্পষ্ট তিনি বিবাহ করেন নি। কিসের ভিত্তিতে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ নিয়ে নেতাজি অনুরাগী নানা সংগঠন ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
একটি বাংলা জাল চিঠি যেখানে এমিলি, অ্যানিটার কোনও নাম নেই সেটিকে দাবিদার পরিবার বিবাহের শংসাপত্র বলে এতকাল দাবি করে এলেও এবছরই আলিপুর বার্তা পত্রিকায় ওই চিঠির অন্তঃসার শূন্যতা প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই জাল চিঠিটি সুভাষচন্দ্রের মেজদা শরত্ বসুকে লেখা বলে কথিত। দেখা গেছে জাল চিঠির বাংলা বানান একাধিকবার সংশোধন করে নেতাজি ভবনে এখন রাখা হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অমিতাভ সেন প্রতিবেদকে জানিয়েছেন যে, দেশবন্ধুর সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের রেকর্ডেড ইতিহাস থেকে জানা যায় নেতাজি চিরকুমার এবং স্বামী বিবেকানন্দের মতোই তার ত্যাগব্রতীর জীবন। এমিলি শেঙ্কেল শুধুমাত্র সুভাষচন্দ্রের টাইপিস্ট ছিলেন। অ্যানিটা প্রথম ভারতে এলে তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ কলকাতার রোইং ক্লাবের সামনে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল বলে তিনি জানান। মিস্টার সেন এও জানান যে, প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিয়ে অবহিত করলে তিনি একাজ করতেন না।
সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে অ্যানিটাকে কন্যা মান্যতা দিয়ে ঘুর পথে চিতাভষ্ম পন্থী অ্যানিটার তথাকথিত নেতাজি ভষ্ম এদেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জনৈক আইনজীবী দাবি করেছেন এমিলি-অ্যানিটাকে ভারতরত্ন কিংবা কোনও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হোক। তিনি আরও লিখেছেন রাশিয়াতে নেতাজির মৃতু্য হয়েছে ও গুমনামী বাবা নাকি আসলে একজন খুনী। এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুকে। ওই আইনজীবী কয়েকজন প্রতিবাদকারীকে নানা হুমকি ও অশালীন কথাবার্তা লিখতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। নেতাজি চর্চার অন্যতম অগ্রণী ৮০ বছরের বৃদ্ধ বিজয় নাগকে অত্যন্ত কুরুচিকরভাবে ভয় দেখানো হয়েছে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ফেসবুকে লক্ষ্য করা গেছে।
নেতাজি গবেষক ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কেশব ভট্টাচার্যম সরাসরি জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রীর ওই কমিটি থেকে অ্যানিটার নাম না সরালে কমিটির কাজ করা উচিত নয়। ওই জনৈক আইনজীবী সম্পর্কে তার স্পষ্ট বক্তব্য যে, ইনি নেতাজি সংক্রান্ত নানা মামলা করার কথা সংবাদ পত্রে বললেও কোনও মামলা তিনি দেখেননি। একজন চেতনা সম্পন্ন আইনজীবী কখনোই এমন নেতাজি সম্পর্কে এমন কুরুচিকর বলতে পারেন না। কলকাতা দিল্লিতে বহুবার নেতাজি তদন্ত কমিশনের অধিবেশন হয়েছে কখনই ওই আইনজীবী উপস্থিত হননি বা সোভিয়েতে নেতাজি হত্যার এক টুকরো প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে আলোকিত ভেকধারীরা বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকদলের অন্দরে বা সংঘ পরিবারের অন্দরে সক্রিয় হয়ে রয়েছেন। এর মূল কারণ হলো নিজের মতাদর্শের রাজনৈতিক দলকে তুলে ধরা এবং ভিতর থেকে শত্রুদলকে নিকেষ করা। এমন কূটনৈতিক রাজনীতির খেলায় নেতাজির মতো এমন এক বিশ্ব পিতাকে কালিমা লিপ্ত করা যে তাদের মোটেই নৈতিক কাজ নয় তা তারা জেনেও এমন কাজে সক্রিয় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় শাসক দল নেতাজির সম্মানার্থে বহু কাজকর্ম তুলে ধরেছেন মানুষের কাছে কিন্তু তাদের এই কাজগুলিকে গৌণ করবার লক্ষ্য নিয়েছে এই অসাধু কারবারীরা। পরিবার বা দলের কিছু সদস্যরা এখনও তা বুঝতে পারছে না। এভাবেই নেতাজির আদর্শকে এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতাজি প্রীতিকে গৌণ করে তুলছে ভেকধারীরা। খুব সচেতনভাবেই তাদের এই কার্যে কলাপ আপামর মানুষের কাছে এবং সেই দলের কাছে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। বিজেপিকে এবং সংঘ পরিবারকে এদেরকে আতস কাঁচের তলায় ফেলে মূল স্বরূপটি বোঝা দরকার এবং শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version