উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি :
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমনে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। আবারও বাঘের আক্রমনে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবির।আহত এক মৎস্যজীবি। মৃতের নাম প্রদীপ সরদার (৪৫)।মৃত মৎস্যজীবির বাড়ি কুলতলি থানার কাঁটামারি গ্রামে।স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে,কুলতলির কাঁটামারি গ্রামে র বাসিন্দা মৎস্যজীবি প্রদীপ সরদার সহ তিনজন নৌকা নিয়ে গত সোমবার কুলতলি থেকে সুন্দরবনের নবেগী খালের নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন।গত প্রায় ৪ দিন ধরে তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন।বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টা নাগাদ সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন। সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ প্রদীপ সরদারকে টার্গেট করতে থাকে।এদিকে বাকী মৎস্যজীবিরা আনমনে নদীতে কাঁকড়া ধরার দ্রোণ ফেলতে ব্যস্ত।আচমকা সুন্দরবন জঙ্গল থেকে দ্রুত গতিতে বাঘ বেরিয়ে আসে।মুহূর্তে সকলের অলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রদীপের ঘাড়ে।ঘাড় মটকে তাকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।বাঘ তার শিকার নিয়ে একটু গভীর জঙ্গলের দিকে যেতেই প্রদীপের সঙ্গীরা বাঘের কবল থেকে প্রদীপকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়।বাঘ তাঁর শিকার ছাড়তে নারাজ।রুদ্রমূর্তি ধরে বাঘ মৎস্যজীবিদের সামনে রুখে দাঁড়ায়।দীর্ঘ প্রায় ঘন্টাখানেক চলে বাঘে মানুষের লড়াই।অবশেষে মৎস্যজীবিদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাঘ শিকার ছেড়ে গর্জন করতে করতে পিছু হটতে থাকে।পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এক সময় বাঘ ভয় পেয়ে দৌড়ে সুন্দরবনে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।আর প্রদীপের সঙ্গী মৎস্যজীবিরা বাঘের কবল থেকে সঙ্গীকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই মৎস্যজীবি।আর এই ঘটনায় এক মৎস্যজীবি আহত হন।আহত মৎস্যজীবি হলো চুনিলাল সরদার। জয়নগরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি আছে। শুক্রবারও সেখানে চিকিৎসা চলছে তার।বৃহস্পতিবার রাতে মৃত মৎস্যজীবির দেহ নিয়ে ফেরে সঙ্গী সাথীরা।শুক্রবার মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সুত্রের খবর।আচমকা এই দুর্ঘটনার কথা শুনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সকলেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় মৃতের পরিবার সহ সমগ্র কাটামারি এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।বন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে এক মৎস্যজীবির মৃত্যু হয়েছে।মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হচছে।আর মৃত মৎস্যজীবির পরিবারের হাতে দ্রুত সরকারি ক্ষতি পূরণের টাকা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন এপিডিআর সংগঠনের দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল।তিনি শুক্রবার বলেন, বারবার একই ঘটনা ঘটে চলেছে।গত দুমাসে তিনজন মৎস্যজীবি বাঘের আক্রমনে মারা গেল এবং একজন আহত হলেন।বিকল্ল কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের মৎস্যজীবিরা জঙ্গলে চলে যায় রোজগারের আশায়। তাই তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের নজর দেওয়ার দরকার। পাশাপাশি এদের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের টালবাহানা করলে চলবে না।দ্রুত তাদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরনের টাকা তুলে দিতে হবে।