নিজস্ব প্রতিনিধি: পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়লে রোজগার বাড়ে সরকারের আর দুর্ভোগ বাড়ে মানুষের। গণতান্ত্রিক ভারতের অর্থনীতিতে এ এক অদ্ভুত খেলা। জনদরদের জার্সি পরে এই ম্যাচের দুই খেলোয়াড় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এতই মত্ত যে তেলের উপর কর কমাবার দাবি তারা শুনেও শুনতে পায় না। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবস্থার বেশিরভাগটাই যেহেতু বেসরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল তাই এখানে এই খেলার স্বাদ একটু অন্যরকম। এ রাজ্যের সরকার তেলের ওপর কর চাপানোর পাপ স্খালন করতে চায় কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়ে আর বাসের ভাড়া না বাড়িয়ে। অনেকটা খুনীর গঙ্গাস্নানে পাওয়া প্রশান্তির মতো। কিন্তু এতে যে কোনও পূণ্যলাভ হয় না তা হাড়ে হাড়ে পাচ্ছেন এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ।
আগে বাসভাড়া নির্ধারিত হতো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বাসের ভিতর টাঙানো থাকত আরটিএ-র রেট চার্ট। সেভাবেই ভাড়া গুনতেন সাধারণ মানুষ। এখন সরকারের অনড় মনোভাবে ভাড়া বাড়বে বাস মালিকের খেয়াল খুশি মতো। রাজ্য সরকার পুরানো ভাড়ায় বাস চালানোর ফতোয়া জারি করে নীরব দর্শকের ভমিকায়। ফলে সরকারি নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থায় রোজ বাড়ছে ক্ষোভ বিক্ষোভ। সাধাণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা। বেসরকারি বাড়তি ভাড়া গুণে ঠাসাঠাসি ভিড় ঠেলে বেরোতে হচ্ছে রুজি রোজগারের টানে। জলে নেমেও চুল না ভিজিয়ে বাসভাড়া বৃদ্ধির এই কৌশলে পশ্চিমবঙ্গ যে অসাধারণ তাতে সন্দেহ নেই।
বামফ্রন্ট সরকারের মুন্সিয়ানায় বেসরকারি পরিবহনের অঙ্গ অটো ও রিক্সা ভাড়া আগেই চলে গিয়েছে হাতে। এবার মা-মাটি-মানুষের তণমূল সরকার বাসভাড়াও তুলে দিল বাস মালিকদের জিম্মায়। ফলে রেল ছাড়া এখন রাজ্যের বেসরকারি পরিবহণ পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অর্থাত্ এ রাজ্যের রাস্তায় বাস নামানো এবং তার ভাড়া নির্ধারণের নিয়ন্ত্রক বেসরকারি মালিকরা। সরকার তার দায় ঝেড়ে ফেলে মানুষের কাছে বার্তা দিচ্ছে তেলের দাম বাড়লেও কোনও চিন্তা ভাড়া বাড়াতে দেবে না সরকার। সম্প্রতি পরিবহনের কিছু ফি মকুব করেছে সরকার। যদিও মালিকরা তাকে মোটেই স্বাগত জানায় নি। বরং বলেছে অনাদায়ী ট্যাক্স আদায়ের এটা একটা কৌশল মাত্র। সরকার আর মালিক পক্ষের এই দ্বৈরথ চলতেই থাকবে। তেলের বাড়তি দাম আর বাড়তি যথেচ্ছ ভাড়ার চাপে যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে মানুষকে।