পার্থসারথি গুহ
কোভিড নিয়ে ব্যতিব্যস্ত মহানগরে সোমবারীয় নারদ চিত্র অনেক কিছু এলেমেলো করে দিয়েছে। বর্ষীয়ান মন্ত্রী থেকে তাবড় কেউকেটাদের এভাবে পুরনো একটা মামলায় যে গ্রেফতার করা হতে পারে ভাবতেই পারে নি কেউ। যথারীতি প্রিয় নেতাদের গ্রেফতারিতে ফেটে পড়েছে শাসকদলের বশংবদরা। চেতলা থেকে চিৎপুর সর্বত্র বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরের সামনে আর রাজভবনের সন্নিকটে সেই ক্ষোভ সুনামির আকার নিয়েছে। হবে নাই বা কেন? সবই ঠিক চলছিল যে! কদিন আগেই শত্রুর মুখে ঝামা ঘষে হইহই করে জিতে এসেছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
সবকিছু যখন নিজেদের ফেবারে ঠিক সেইসময়ে নারদে হেভিওয়েট গারদ নিঃসন্দেহে অনেকগুলি প্রশ্নের অবতারণা করছে। তাহলে কী মমতারা যা বলছেন তাই ঠিক? অর্থাৎ বাংলা দখলের ফানুস ফেটে দিল্লির বিজেপির মহামহিমরা দাঁতনঁখ বেআব্রুভাবে বের করছেন। যাতে ফালাফালা হয়ে উঠছে বঙ্গ রাজনীতি। রাজ্যের শাসকের অভিযোগ এই ব্যাপারে কেন্দ্রের মূল চালিকাশক্তি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বনাম মুখ্যমন্ত্রীর এই সম্মুখসমর যখন শুরু হয়েছে তখনই আবার রাজ্যকে যুঝতে হচ্ছে মারণ রোগ কোভিড ১৯ এর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে। এর পিছনে পিছনে আবার উঁকি মারছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামের আরেকটি মারাত্মক ভাইরাস। এমতাবস্থায় চার তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারি মোটেই সময়োচিত নয় বলে মন্তব্য করছেন একদল সমালোচক। এখানেই কিন্তু পাল্টা যুক্তি উঠে আসছে। অপরাধীকে গ্রেফতারের কী আবার নির্ঘন্ট বা পাঁজি দেখা ক্ষণ আছে নাকি? বিশেষ করে যে অপরাধীরা এতটাই প্রভাবশালী। এরসঙ্গে আরো একটা প্রশ্ন জুড়ছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে কী এবার কলকাতা থেকে হেভিওয়েট বিচারের স্থান পালটে যাবে?
এই কথা উঠলেই সবাই ওড়িশার গল্প বলছেন। কিন্তু একটা মহল আবার জোরের সঙ্গে দাবি করছে হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বাধীন অসম রাজ্যে এবার বিচারাধীন বন্দী হয়ে থাকতে পারে রাজ্য রাজনীতির চতুর্ভুজ। এই পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও টনক টনটনাচ্ছে আরেকটি জোরদার বিষয়। সেটি হল ভিতরে ভিতরে কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সেটিংয়ের খেলা খেলবে না তো? এই প্রসঙ্গে এবার বিজেপির এতো রইচই কাণ্ড করেও রাজ্যে একটা গণ্ডিতে আটকে যাওয়ার প্রসঙ্গও উঠছে। দুষ্টু লোকেরা এখানেও যে কীসব গন্ধ টন্ধ পেয়েছে। যার প্রতিপাদ্যই হল যার মূলুক তারই থাক। সুলুকসন্ধান চলতে থাক। সেদিক থেকে দেখলে নারদ মামলার পাততাড়ি অনেক আগেই হয়তো গুটিয়ে ফেলা যেত। বিধানসভা ভোটের অনেক আগেই এই পদক্ষেপ করা যেত। তা না করে একেবারে নিরঙ্কুশ জয়ের পর একটা সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা? মানুষ তো অন্যভাবে নিতেই পারে নাকী? সেজন্যই আবার তলে তলে কোনও তু তু মে মে, তু সামাল বঙ্গাল,মে সামাল দিল্লি জাতীয় খেলা হচ্ছে না তো? হাওয়া ভাসছে এমন অনেককিছুই।