Home Uncategorized টিকার গেঁড়োয় ঢাকিদের করুণ অবস্থা

টিকার গেঁড়োয় ঢাকিদের করুণ অবস্থা

0

কুনাল মালিক : দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বজবজ-২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বুড়ুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রুইদাস পাড়া ঢাকিদের গ্রাম হিসাবেই দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। আনুমানিক প্রায় ২০০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এই গ্রামে ঢাক ও কাঁসি বাজিয়েই পুরুষরা জীবিকা অর্জন করতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই গ্রামেই কোনো পুজো-পার্বনে বাইরে থেকে ঢাক ভাড়া  হচ্ছে। এমনই অভিমত প্রকাশ করলেন ওই গ্রামের বিমল দোলুই। তিনি জানালেন এক সময় এই গ্রামের প্রখ্যাত ঢাক শিল্পী হিসাবে নাম ছিল মদন রুইদাস, পুণ্য রুইদাসের। কলকাতা শহর থেকে ঢাকিদের ডাক পড়ত। কিন্তু বর্তমানে ৮-১০ জন এই ঢাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। করোনা কালে পুজো-পার্বন বন্ধ হওয়ার কারণে ঢাকিদের আর  ডাক পড়ে না। তাই অনেকেই ঢাক বাজানো ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যেমন সন্ন্যাসী রুইদাসের ছেলে জয়ন্ত রুইদাস জানালেন তিনি এখন বেহালায় রিক্সা চালান। যখন বাবা লোকজন পায় না তখন বাবার সঙ্গে কাঁসি বাজান। বর্তমানে এই গ্রামের প্রদীপ রুইদাস, সন্ন্যাসী রুইদাস এখনও কলকাতা থেকে ডাক পান।

৬২ বছর বয়স্ক  রুই দাস জানালেন, আগে প্রচুর অনুষ্ঠানে ডাক পেতাম, কিন্তু গত দুবছর ধরে করোনা কালে আমাদের কোনো কাজ নেই। দুর্গা পুজোর সময় অবশ্য ডাক পাই। গত ২০ বছর ধরে রামপুরহাট জিঞ্জিরা বাজারে ঢাক বাজাই। এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় বেহালা সখের বাজারে ঢাক বাজাব। তিনি বলেন, আমার ঠাকুর্দা, বাবা সকলেই ঢাক  জীবিকা অর্জন করেছেন। তাঁদের পথ ধরেই এখনও এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছি। তবে অনেকেই এখন জীবিকার টানে অন্য পেশায় চলে গেছে। তাছাড়া এখন বিভিন্ন পুজোতে রের্কডিং ঢাকের শব্দ বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে ঢাকির সাজে নাচের তালে যে কাঁসির শব্দে আসল ঢাক যখন বেজে ওঠে তার মহিমাই আলাদা। সন্ন্যাসীবাবু জানালেন,  করোনার প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে। তবে এলাকার অনেক মৃত্শিল্পী, ঢাক শিল্পী, ব্রাহ্মণ জানালেন পুজো প্রায় আসন্ন কিন্তু অনেকেই এখন ভ্যাকসিন পাননি। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিলে ভালো হয়। ঢাকিরা এখন দোনোমোনোয় পড়ে রয়েছে কলকাতায় তারা ঢাক নিয়ে এলে আদৌ কোনও বায়না পাবে কিনা? কারণ ইতিমধ্যেই নির্দেশ জারি হয়েছে  মণ্ডপের মধ্যে দুই ডোজ ভ্যাকসিন হলে তবেই প্রবেশ করা যাবে। ভ্যাকসিনের গেঁড়োয় ঢাক বাজাতে পারবে কিনা। তারা বলেন, পুজোর আগে আগে ভ্যাকসিনের সময় হলেও কলকাতায় গিয়ে ভ্যাকসিন নিলেও হাত ব্যথা বা অন্যান্য সমস্যার কথা ভাবাচ্ছে আমাদের। হাত যদি ব্যথা থাকে তাহলে ঢাক বাজানো বন্ধ হবে। তবে এবারে বাড়ির যে  ছোট ছেলেরা বাবার হাত ধরে কলকাতার পুজোয় কাঁসি বাজাতে আসে শুধুমাত্র কলকাতার পুজোর আমেজটুকুকে গায়ে মাখবে বলে তাদের খুবই মন খারাপ কারণ ওই বয়সীদের এখনও কার‌্যকর হয়নি। তাই তারা কলকাতাতে এলেও কোনও পুজো প্যান্ডেলে ঢুকতে পারবে না। মন খারাপ করে তারা বলে, এবছরে আর কলকাতার পুজো দেখতে যাওয়া হবে  বাড়িতে থাকতে হবে মায়ের সঙ্গেই।

কলকাতার স্বনামধন্য পুজো কমিটি ত্রিধারা সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক তথা রাসবিহারী বিধানসভার বিধায়ক ও পুরসভার কোঅর্ডিনেটর দেবাশিস কুমার বলেন, ঢাকিদের যাদের ডবল ভ্যাকসিন হয় নি  তাদেরকে আমরা যদি সময় হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে ঢাক বাজানোর সুবিধা করে দেবো। এছাড়াও যদি দেখা যায় কারুর  সময় হয়নি তাহলে আমরা আরটিপিসিআর টেস্ট করে নিয়ম অনুযায়ী পুজো সম্পন্ন করবো। ঢাকিদের ঢাক বাজাতে অসুবিধা হবে না। সব পুজো কমিটিকেই এমন অনুরোধ করা হয়েছে। প্যান্ডেলের কাজে যারা যুক্ত তাদের সকলেরই ডবল ডোজ করিয়ে দেওয়ার জন্য। একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে থাকা রাজ্যের মন্ত্রী বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়  ডবল ডোজ হলে তবেই আমরা সেই ঢাকিদের নেবো। যদি দ্বিতীয় ডোজের সময় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আমরা তাদের দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে দেব। উত্তর কলকাতার আকর্ষণ শোভাবাজার রাজবাড়ির এবছরের পালাদার এবং ট্রাস্টির সদস্য দেবরাজ মিত্র বলেন, আমাদের পরম্পরার ঢাকিরা ইতিমধ্যেই দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছে। তাদের সার্টিফিকেটও ইতিমধ্যে আমাদের কাছে এসে  সব কিছুই দেখে তারপর তাদেরকে ডাকা হয়েছে। তিনি আরও জানান কোভিড বিধি মেনেই এ বছরের পুজো হবে ২০ জন করে দর্শনার্থী ঢোকানো হবে। বাড়ির সকলে যারা পুজোর কাজে যুক্ত হবেন তাদেরও দুই ডোজ ভ্যাকসিন হয়ে গিয়েছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version