Home General টিকাকরণে দলবাজির অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায়

টিকাকরণে দলবাজির অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায়

0

কল্যাণ রায়চৌধুরী
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রচুর অভিযোগ। প্রাথমিক পর্বে সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষ ভ্যাকসিন পায়নি, এহেন অভিযোগের পাশাপাশি লাইনে দুশো বা আড়াইশো জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর খাতায় কলমে অতিরিক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে, এমন অভিযোগও দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান পর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই যাতে ভ্যাকসিন পান, সেজন্য দুয়ারে ক্যাম্পিং বা শিবিরকরণের মাধ্যমে টিকাকরণ করার জন্যে গ্রামে-গঞ্জে ভ্যাকসিন নেবার প্রতি মানুষের প্রবণতা তৈরি হয়েছে, বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিমত। এর পাশাপাশি, এখনও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের কর্মীরা রাজনৈতিক রঙ দেখে ভ্যাকসিনের জন্য নাম নথিভুক্ত করছেন বলেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
হাবড়ার হাট থুবার বাসিন্দা অনুপ বিশ্বাস বলেন, এতদঞ্চলে করোনা ভ্যাকসিন হচ্ছে এখন পার্টি ওরিয়েন্টেড। আমি প্রাথমিক পর্বে সরকারি কাগজপত্র দেখিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভ্যাকসিন দুটোই নিয়েছিলাম। কিন্তু এবারে আমার স্ত্রীর জন্য জয়গাছিতে নাম নথিভুক্ত করতে গেলে সেখান থেকে বলা হয়, এভাবে হবে না। ওয়ার্ডভিত্তিক আমাদের কর্মীরা গিয়ে নাম নথিভুক্ত করে আনবে। সেইমত ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এখানেই আমাদের আশঙ্কা, এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা কতখানি থাকবে, তা নিয়ে যথেষ্ট শংসয় আছে।
অশোকনগরের হেমাঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্ণধার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শাসকদলের লোক যারা বেছে বেছে আগে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আর এই দলবাজিই হচ্ছে বিশেষ করে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের ক্ষেত্রে।
বিড়ার বাসিন্দা সন্তোষকুমার দাস বলেন, বর্তমান শাসক দলের কর্মীদের কোনও জিনিস থেকেই ফায়দা নেওয়ার অভ্যেস আর যাচ্ছে না। চাল, ডাল, ত্রিপল ইত্যাদি ছাড়াও কন্ট্রাক্টরদের টাকা থেকে কাটমানি নেওয়া অভ্যেস সহজে বদলায় না। তাই এখন কোভিড ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করেও শাসক দলের একাংশ চালিয়ে যাচ্ছে দলবাজি। নিজেদের মত করে তালিকা তৈরি করে সেই মত ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হাবড়া শহর তণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সিতাংশু (ঝন্টু) দাস বলেন, রাজনৈতিক রঙ দেখে ভ্যাকসিন দেবার কথা যারা বলছেন, তারা ঠিক বলছেন না। পুরসভা থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা তৈরির কথা শুরু করেছে। আর এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও দলমত দেখা হচ্ছে না। তালিকা অনুযায়ীই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার পুর প্রশাসক প্রবোধ সরকার বলেন, আমাদের এখানে দলমত নির্বিশেষে টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াইশো করে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সকালবেলা। সারাদিন আমরা নামের তালিকা নিই পুরসভায়। পরদিন সেই তালিকা ধরে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বারাসতবাসীর অভিযোগ, বয়স্ক বা প্রবীণ নাগরিকদের টিকাকরণের জন্য বিভিন্ন পুরসভা এমনকি পার্শ্ববর্তী মধ্যমগ্রাম পুরসভা, যেমন বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বিশেষ ক্যাম্প করে বা, বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে টিকাকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, বারাসত পুরসভার পক্ষ থেকে তেমন কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে বারাসত পুরসভার পুর প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা যেরকম ভ্যাকসিনের জোগান পাচ্ছি, দিনের দিন তার সবটাই দিয়ে দিচ্ছি। দৈনিক প্রায় চোদ্দ-পনেরোশো করে টিকাকরণ হচ্ছে। একদিন ঊনিশশো পেয়েছি, তাও দিয়ে দিয়েছি। আর এটা বারাসত পুরসভার অন্তর্গত চারটে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলি হল, দ্বিজহরি দাস কলোনি, নবপল্লী বয়েজ স্কুলের কাছে, হাটখোলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বাদুতে। এখানে দলবাজির কোনও ব্যাপার নেই। লাইনে যারা থাকবেন, তাদেরকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
বারাসত স্বাস্থ্য জেলার মুখ্যা স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস কুমার রায় বলেন, আমরা কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন সবই দিচ্ছি। যখন যেটা পাচ্ছি, সেইমতো দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি অনুযায়ীও দেওয়া হয়ে ছাকে। সরকারিভাবে বলতে পারি প্রতিদিন প্রায় পনেরো হাজারের মতো ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এছাড়া বেসরকারিভাবেও তো আরও দেওয়া হচ্ছে। আঠারো বছরের থেকে সবাই এই টিকাকরণের আওতাভুক্ত।
আইএমএ-র বারাসত শাখার প্রেসিডেন্ট ডা. তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বেসরকারিভাবে কোভিশিল্ডটাই দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন প্রতি ধার্য হচ্ছে ৭৮০ টাকা। বারাসতে ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার এবং সুরক্ষা এই দুটি জায়গা থেকে দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নবান্ন থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য সংশ্লিষ্ট থাকার অনুমতি নিয়ে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে গেলে তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, এই মর্মে এক নির্দেশিকা জারি হয়। এ প্রসঙ্গে হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, আমার কাছে এমন কোনও নির্দেশিকা আসেনি। ফলে এ বিষয়টা আমার জানা নেই।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version