ইতিহাসের স্বচ্ছতার পাশাপাশি মোহমুক্ত ভাবনায় যে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত জরুরি। সম্প্রতি ইতিহাসের পুর্নলিখন নিয়ে ভারতে রাজনৈতি ভাবনা চলছে। নাম পরিবর্তন থেকে পুরোন সৌধের পুরাতাত্ত্বিক অনুষ্ঠান নিয়ে। বাস্তব ক্ষেত্রে যুগে যুগে শাসকদের হাতে পরে বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই কর্তার ইচ্ছায় কর্ম ভাবনা কাজ করেছে। অতীত দিনে বৈদেশিক আক্রমণে ভারতের অজস্র মঠ মন্দির লুট ধ্বংসই নয়, নামকরণের প্রচলনও উল্লেখ যোগ্য ছিল। ব্রিটিশ আমলেও ধনসম্পদ লুটের সঙ্গে নাম পরিবর্তনের ঐতিহ্য অব্যাহত ছিল। সে সবই আজও বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে। কখনও কখনও রাজনৈতিক বাতাসে যে সব সত্য কিছুটা নাড়াচাড়া হলেও আইন আদলতের ধাক্কায় স্তিমিত হয়ে যায়। দেশ ভাগের পর এদেশে যে সব রাজনৈতিক দল কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে শাসন করেছে সেখানেও দেখা গেছে পরিবার তন্ত্রের প্রচারের ঝোঁক, প্রকল্প পরিকল্পনায় নাম করণের বৈসাদৃশ্যের বাড়াবাড়ি। এমন কী নিজের নামেই শাসকরা অনেক কীর্তিকলাপ জীবিত অবস্থায় স্থাপন করে থাকেন অতীত দিনের সম্রাট রাজাদের মতো।
সাম্প্রতিক কালের ইতিহাস পুর্নলেখনের সূত্রপাত হোক দেশভাগের নেপথ্য ইতিহাস নিয়ে। যে ইতিহাস দেশবাসীর কাছে আজও আড়ালে। আজাদ হিন্দের সেনানীদের বিচার পর্ব জুড়ে দেশে যখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঝড় সৃষ্ট হয়েছিল তখন যে পরিবেশ কাদের কূটনৈতিক চালে জাতি দাঙ্গায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল যে সত্য সামনে আসা প্রয়োজন। যদিও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কেন আজাদ হিন্দ এর শহীদদের রক্ত মাখা ব্রিটিশ কমান্ডার মাউন্ট ব্যাটেনের হাত ধরে দ্রুত দেশভাগের ব্যাখ্যা করলেন আর কেনই বা ব্রিটেনের শাসননীতি নাগরিকদের গ্রহণ করে রাখলেন তা সামনে আসা জরুরি। দেশভাগের সমস্ত নথিপত্র প্রকাশে ভারত সরকারের অনীহা কিংবা আজও কমন ওয়েলথ এ ভারতের থাকার কারণ কী তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। স্বাধীনতা শব্দের পরিবর্তে ব্রিটিশের ডোমিনিয়ন ভারত ও পাকিস্তান হয়েছিল কেন তা আজও ইতিহাসের আলোকে অস্পষ্ট। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি চোদ্দটি রাষ্ট্রে সঙ্গে যুদ্ধ অপরাধী সনদে ভারত কেন সই করে দিল তা দেশবাসীর কাছে কোন দিন জানান হল না। জওহরলাল নেহেরুর আমলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে যে মিথ্যাচার হয়েছিল কংগ্রেস মুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখা প্রধান মন্ত্রী সেখান থেকে একটুও সরলেন না কেন? তিনি কংগ্রেস ভক্ত হয়ে প্যাটেল মূর্তি করলেন কিন্তু যে প্যাটেল নেহেরু নেতাজির চরিত্র হননে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন তাদের প্রতি অনুরক্ত রইলেন। নির্বাচিত নেতাজি ফাইল প্রকাশ করা হল অথচ সেই ফাইলগুলিতে প্রতি মিথ্যাচার অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী অগ্রাহ্য করলেন অথচ তিনিই একদা জানিয়ে ছিলেন ইতিহাসের দম আটকে রাখা উচিত নয়। ভারত ছাড় আন্দোলনের প্রভাব ১৯৪২-৪৩ এই শেষ হয়ে গিয়েছিল অথচ অহিংস ম্যাজিকে দেশ স্বাধীন এর প্রচার আজও অব্যাহত। এমন ধারার অজস্র ঐতিহাসিক সত্যকে যথাযথ ভাবে সত্যের আলোকে তুলে আনা জরুরি। রাজনৈতিক রঙে যতটুকু জরুরি শুধু সেই টুকুকেই মান্যতা দেবার মানসিকতা বিকৃত ইতিহাসের আবর্তন ছাড়া কিছু নয়। দেশের মানুষ তাঁদের শিকড়কে যাতে সঠিকভাবে চিনতে জানতে ও বুঝতে শেখে এবং যে শিক্ষায় দেশের কর্মকাণ্ডে নিজেদের সমর্পণ করতে পারে, সামিল করতে পারে সে জন্যই ইতিহাসের সঠিক লিখন প্রয়োজন। বামপন্থী, ডানপন্থী, দলপন্থী কিংবা পরিবার পন্থী ঐতিহাসিকদের মানসিকতায় নয়, প্রকৃত সত্যান্বেষীর কলমে উঠে আসুক অতীত, বর্তমান ও আগামীর ইতিহাস।