সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং : অবশেষে নায্য দাবী এবং সরকারী ভাবে স্বীকৃতি আদায়ের দাবীতে রাজপথে নামলেন ‘বঙ্গ জননী’ অর্থাৎ আশা কর্মীরা।মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন দাবী সম্মিলিত স্বীকৃতি আদায়ে আন্দোলনে সামিল হলেন ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং,জীবনতলা,বাসন্তী,গোসাবা ব্লকের প্রায় ৯০০ আশা কর্মী। এদিন ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ড থেকে একটি মিছিলে বঙ্গ জননীরা যোগ দেয়। স্লোগান দিতে দিতে মিছিল পৌঁছায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে একাধিক দাবী সম্মিলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেন এসিএমওএইচ কাছে।উল্লেখ্য প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকায় বিভিন্ন বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন আশা কর্মীরা। বর্তমানে তাঁরা সাম্মানিক পেয়ে থাকেন ৫২৫০ টাকা।তাঁদের কে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এছাড়াও আশা কর্মীদের দাবী তাঁদের কে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। প্রাপ্য দেওয়া হয় না। বরং বিভিন্ন হাসপাতালে প্রসুতি মায়েদের কে নিয়ে গেলে তাঁদের কে হেনস্থার শিকার হতে হয়। হাসপাতালের ডাক্তার,নার্স থেকে সমস্ত কর্মীরাই দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। সামান্য সম্মান টুকু মেলে না।তাঁদের দাবী,অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো আশা কর্মীদের কে সরকারী স্বীকৃতি দিতে হবে।নুন্যতম ১৫০০০ টাকা বেতন দিতে হবে। কর্মরত অবস্থায় আশা কর্মীর মৃত্যু হলে নুন্যতম পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের মতো সরকারী ছুটি দিতে হবে।আরো অভিযোগ, প্রসুতি মায়েদের কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে যে টাকা প্রাপ্য সেটা যথা সময়ে দিতে হবে। বিলম্ব করে টাকা সুদে খাটানো চলবে না।  

উল্লেখ্য করোনা কালে আশা কর্মীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত অপরিসীম। যার ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশা কর্মীদের কে প্রথম সারির যোদ্ধা,বীরাঙ্গনা আখ্যা দিয়েছিলেন বলে আশা কর্মীদের দাবী। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী আশা কর্মীদের কে ‘বঙ্গ জননী’ স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

বর্তমানে সেই সমস্ত বঙ্গজননীরা আজ স্বীকৃতি ও দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে।

গোসাবা ব্লকের আশা ইউনিয়নের সভানেত্রী প্রভাতী মন্ডল নাথ জানিয়েছেন, ‘আমরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে থাকি। নিজেদের পরিবারের কথা স্মরণ থাকে না। সুখ দুঃখ বিসর্জন দিয়ে কাজ করার পরও হাসপাতালে প্রসুতি মায়েদের নিয়ে গেলে চরমতম হেনস্থা হতে হয় ডাক্তার,নার্স,আয়াদের কাছ থেকে।রাজ্য সরকার যেখানে চাইছেন মায়েদের প্রসব হাসপাতালেই হোক। সেখানে হাসপাতালের দুর্ব্যবহারে জন্য প্রসুতি মায়েরা বাড়িতেই প্রসব করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নার্সিং হোমে যাচ্ছেন। এছাড়াও একজন ঝাড়ুদার যে বেতন পেয়ে থাকেন তার তুলনার আশাকর্মীরা যে সাম্মানিক পেয়ে থাকি তা অত্যন্ত নগন্য।আমাদের সরকারী ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীর স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি নুন্যতম বেতন ১৫০০০ টাকা করতে হবে।’

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ আশা ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমাতারা খাতুন জানিয়েছেন,একজন আশা কর্মী প্রসুতি মা কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে যে টাকা পাওয়ার কথা,সেই টাকা পেতে বিলম্ব হয়। ফলে সেই টাকা কোথায় থাকে?নিশ্চয় সুদে খাটানো হয়। এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া আশা কর্মীদের উপযুক্ত বেতন ও সম্মান দিতে হবে। বিগত দিনে আমরা আন্দোলন করে পালস্ পোলিও বন্ধ করে দিয়েছিলাম।টনক নড়েছিল  স্বাস্থ্য ভবন সহ রাজ্য সরকারের।আমাদের কে ক্ষুদ্র মনে করলে চলবে না।অন্যান্য রাজ্যে আশা কর্মীরা যদি সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায়,আমাদের রাজ্যে আমরা কেন পাবো না?আমাদের নায্য প্রাপ্য না পেলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য থাকবো। ’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here