হারিয়ে যাওয়া বাঙালী সংস্কৃতি আর এঁতিহ্য খুজে পাওয়ার কাহিনী রাস। হারিয়ে
যাওয়া যৌথ বাঙালী পরিবার, তাদের আভ্যন্তরীন ভালবাসা,সম্পর্ক আর মূল্যবোধের দলিল
রাস।এক নাতির তার দিদার কাছে ,এক ছেলের তার শেকড়ের কাছে,একটা হারিয়ে যাওয়া
সোনালী সময়ের ফিরে আসার আখ্যন রাস।
মানিকপুরের গোটা চক্রবর্তী বাড়ি জুড়ে আজ সাজো রব ৷ এমনিতেই বাড়িতে রাসোৎসবের
প্রস্তুতি ,আর ঝুলনের আয়োজন।
তবে আজকের সাজো সাজো রব বাড়ির ছেলে সোমনাথ ১৮ বছর পর বাড়ি ফিরছে তার উচ্ছাসে।
সোমনাথ জীবনের প্রথম ১২টা বছর কাটিয়েছে এই চক্রবর্তী বাড়িতে । বাবা চাকরি সুত্রে
দিল্লীতে ,তিন চার মাসে এক আধবার হয়তো বাড়িতে আসতে পারে । মা আর সোমনাথের জীবন
কাটছিল রুপকথার মতন ।গ্রামের স্কুল, পুকুর, আমগাছ, বৃষ্টিতে ফুটবল,দিদার আচার,কোলে শুয়ে
দেশ বিদেশের গল্প শোনা ,ঝুলন,পাড়ার নাটক, গ্রামের মেলা, বিচিত্রানুষ্ঠান, পিষ্টু,ক্যারাম,পুকুরে
মাছ ধরতে যাওয়া,সাইকেল নিয়ে দূর দৃূরান্তের এডভেঞ্চার,লোডশেডিংয়ে ছাদে মাদুর পেতে
আড্ডা ,পাড়ায় যাত্রা ,বাড়ির সবাই মিলে সিনেমা দেখা,অংকের মাস্টারের পড়ানোর পর ভূতের
গল্প ।সে যেন এক চব্বিশ ঘন্টার উৎসব ।যেখানে শুধুই আনন্দধারা বহমান প্রতিনিয়ত ।যৌথ
পরিবারের সবার ভালবাসায় বেড়ে ওঠা সোমনাথের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল দিদা।সময়ের চেয়ে ঢের
গুন এগিয়ে থাকা,স্পষ্টবক্তা,বাড়ির কর্ত্তী অলকনন্দা দেবী ,সোমনাথের সবচেয়ে
প্রিয় বন্ধু। দিদামার সবচেয়ে প্রিয় সোমনাথ ।সোমনাথের সারল্য আর পাচজনের থেকে
ওকে আলাদা করে দিয়েছে ।ঠাম্মিকে সোমনাথ দিদামা বলে ডাকে ।সোমনাথের যত গোপন কথা দিদামা এর সাথে ।মায়ের চেয়েও সোমনাথের বেশি কাছের দিদামা।এছাড়াও সোমনাথের আর
একজন প্রিয় বন্ধু আছে রাই ।পাড়ার মেয়ে রাই দিনের অধিকাংশটাই চক্রবর্তী
বাড়িতে কাটায়।ওর আর সোমনাথের বন্ধুত্ত দেখে বড়রা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে ওদের
নাকি রাজযোটক মিল,বিয়েটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। সোমানাথের মায়ের সেবার ভীষন
অসুখ,কিন্ত মা কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে শহরের হাসপাতালে যাবে না,মায়ের ইচ্ছা বাড়িতেই
চিকিৎসা হবে ।জ্যেঠিমা কাকীমারা সম্পর্কে জা কম বোন বেশি তাই মা কে এক মূহুর্ত কাছ
ছাড়া করতে চান না,কিন্তু বাড়ির পুরুষদের মত উল্টো। শেষমেশ দিদামার অকাট্য যুক্তি মন
ভাল না থাকলে শরীর সুস্থ হবে কি করে তাই লোকাল ডাক্তার আর গ্রামের জাগ্রত দেবীর
ভরসায় মায়ের চিকিৎসা হতে লাগল বাড়িতেই ।কিন্তু লোকাল ভগবান কিন্বা ডাক্তার কেউই
মাকে বাচাতে পারল না ,মায়ের শেষ নিশ্বাস পড়ল জ্যেঠিমার কোলে ।বাবা ফিরল রাস পূর্নিমার
দিন,সকাল থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নিয়ে ।কাদতে কাদতে বাবা মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করল
বাড়ির লোকেদের ,শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা না করানোর ভুল বাবা ক্ষমা করতে পারেনি।
সেইদিন একমাথা বৃষ্টি নিয়ে সোমনাথের হাত ধরে বাবা বেরিয়ে এসেছিল ওই বাড়ি থেকে
আর কোনোদিন বাড়ি না ফেরার প্রতিজ্ঞা করো বৃষ্টিতে সোমনাথের চোখের জল মিলেমিশে
যাচ্ছিল,বাড়ির সবাই তখন
উঠোনে দাঁড়িয়ে। তারপর থেকে সোমনাথকে ওই বাড়ির সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখতে
দেননি সোমনাথের বাবা ,নিজেও রাখেন নি।
বছর ত্রিশের সোমনাথ আজ মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানি র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কানাডা চলে যাচ্ছে অর্নিদিষ্ট
কালের জন্য।দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে সোমনাথ এর রেজিস্ট্রি বাবার বন্ধুর মেয়ে সাঁঝের সঙ্গে,সেও কিছুদিন পরেই যাবে কানাডা।
কিন্তু ভাগ্যের ফের,সোমনাথ ঘটনাচক্রে আবার সেই মানিকপুরে।মানিকপুর অনেকটা পাল্টে গেলেও বাড়ির মানুষগুলো
একই আছে খাঁটি সোনার হৃদয়ের।নতুন প্রজন্মের ছেলেরা মেয়েরা স্যোশাল মিডিয়া আর
ডিজিটাল সময়ের সাথে যুক্ত হলেও এ বাড়ির সাংস্কৃতিক প্রভাব এড়াতে পারেনি।রাই ডাবলু বি সি এস পাশ করেও এই মফস্বলেই থেকে গেছে,এখানকার ছোট্ট প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের পড়ায় রাই।বড় চাকরির প্রস্তাব,শহরের আধুনিক জীবন সব ছেড়ে রাই ব্যস্ত মানুষ তৈরির কাজে।এখানকার মানুষরা না পাল্টালে দেশ পাল্টাবে কি করে এই রাই এর বিশ্বাস। সোমনাথ যে স্মৃতিতে
ভর করে এখানে এসেছিল সেই আগের সব পাল্টেছে ।গল্লের বই,আড্ডা ,খেলাধুলো এ সবের
জায়গা নিয়েছে গুগল, স্যোশাল মিডিয়া,ওটিটি আর অনলাইন ক্লাসে ।তবু বাঁধন গুলো থেকে
গেছে, মায়া গুলো থেকে গেছে।
আসছে। সোমনাথ কি পারবে দিদামা,চারু ,বাড়ির সব্বাই,গ্রামের অসহায় মানুষ ,বন্ধু অনিশ্চিত ভবিষ্যত ফেলে রেখে কানাডা পালিয়ে যেতে নাকি
থেকে যাবে একজন বাঙালী হয়ে ,রাই এর সাথে এদের একজন হয়ে। রাস পূর্নিমার ঝুলন যে
কৃষ্ণ ছাড়া অসম্পূর্ন। আর হয়তো একদিন রাসের দিনই ফেরত আসবে বাড়ির ছেলে
সোমনাথের বাবা।
দুটো পরম্পর বিরোধী সময়,মূল্যবোধ,হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা,বাঙালী মনন এই কাহিনীর বীজ।
শিকড়ের টান ,নাড়ির টান আর বাঙালীর সংস্কৃতি ধারন করার কাহিনী রাস।
অভিনয়ে
বিক্রম চ্যাটার্জী
দেবলীনা কুমার
অনসূয়া মজুমদার
অনির্বাণ চক্রবর্তী
রনজয় বিষ্ণু
অর্ণ মুখোপাধ্যায়
সুদীপ মুখার্জী
শংকর দেবনাথ
পারিজাত চৌধুরী
অপ্রতিম চ্যাটার্জি
দেবাশীষ রায়
দেবপ্রসাদ হালদার
বিমল গিরি
সুচন্দ্রা ব্যানার্জী
সুরাইয়া পারভিন
স্বাতী মুখার্জী
সঞ্জিতা
মৌসুমি অধিকারী
রিক দেব
পাপিয়া পাল
ঋষভ চক্রবর্তী
রিয়ানকা রয়
পামেলা কাঞ্জিলাল
ঐশ্বর্য পাল
নিলয় সমীরণ নন্দী
সর্বদমন সোম
সুমিত দত্ত
বিশ্বজিৎ রয়
জয়ন্ত ভট্টাচার্য
সত্রাবিত পাল