মানবিক ক্যানিং থানার আইসি

0
76

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং : পুলিশ কথা শুনলেই অনেকেই নাক সিঁটকায়! সেই পুলিশ হাজীর হলেন জীবন সায়াহ্নে চিতার পাশে!নিবর্ক নয়নে অশ্রু না ঝরলেও, হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে যায়! পুলিশ তো,তাই হয়তো নয়নে অশ্রু নেই,তবে হৃদয়ে বহে চলেছে সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ! সালটা ২০২১,কোন এক সহৃদয় ব্যক্তি অসুস্থ এক ভবঘুরে কে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত! ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার ওই ভবঘুরের শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিন বছর হাসপাতালে পড়ে থাকলেও তার পরিবারের কেউ খোঁজ খবর কেউ নেয়নি। মৃত্যুর পর তার দেহ কে সৎকার করবে? এটাই ছিল লাখ টাকার প্রশ্ন! কারন রোগের কারনে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। যে কারনে পুলিশ ওই দেহ নিতে পারেন না। এমন অবস্থায় দীর্ঘক্ষন ওই দেহ নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলতে থাকে। খবর পৌঁছায় ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষের কাছে। তিনি জানতে পারেন তাঁর অফিসারের কাছ থেকে।সৌগত বাবু ভাবতে থাকেন কিভাবে এই ব্যক্তির সৎকাজ করা যায়।তার হৃদয় কেঁদে ওঠে,একটা মানুষের সৎকার হবেনা? এরপর তিনি তাঁর সহকর্মী এসআই শুক্রাঙ্কর সাহা ও শুভঙ্কর করন, মিলন সরকার, আরাফাত সরদার কে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যান ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। ঘড়িকাটা তখন রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। হাসপাতাল থেকে দেহটি দায়িত্ব সহকারে বের করা হল। আইসা সৌগত ঘোষ সিদ্ধান্ত নেন,ওই ব্যক্তির সৎকার তাঁরাই করবেন। এরপর তোড়জোড় শুরু হয় যথাযথ মর্যাদার সাথে সম্মান জানিয়ে সৎকার করা হবে। শুরু হল ফুল,ধুপকাটি আনার প্রক্রিয়া।কিন্তু রাত বারোটা কে দেবে ধুপকাটি আর ফুল? বাজার যে বন্ধ!এমন অবস্থায় এক দোকানদার কে ফোন করে ধুপ ও ফুলের ব্যবস্থা করলেন পুলিশ কর্মীরা। এরপর মৃতদেহ নিয়ে পুলিশ কর্মীরা রওনা দিলেন ক্যানিং বৈতরণী মহাশ্মশানে পথে। সামনে মৃতদেহের গাড়ি‌, তার পিছনে ক্যানিং থানার আইসির গাড়ি।দেখে কোন মতেই বোঝা মুশকিল যে ওই ভবঘুরের পরিবারে লোকজন কেউ নেই! ক্যানিং থানার পুলিশ কর্মীরা যেন তাঁর শেষ যাত্রার অন্তরঙ্গ ছায়াসঙ্গী। এরপর যথাযথ সম্মান জানিয়ে সৎকারের কাজ সম্পন্ন করা হয়।আইসি সৌগত ঘোষ নিজেই পকেট থেকে টাকা বের করে শ্মশানের ডোমদের কে দিলেন। আশেপাশে যাঁরা ছিলেন তাদের কে ভোজন করালেন। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রসঙ্গ আইসি সৌগত ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না “মানুষ মানুষের জন্য”। মানব জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যু! যা চির সত্য। জীবনে শেষ পরিনতি মৃত্যু।প্রত্যেকেই চায় তাঁর মৃত্যুর পরে যেন যথার্থ নিয়ম মেনেই শেষকৃত্য করে পরিবারের লোকজন। এই ভবঘুরের কেউ ছিলো না সৎকার করার জন্য। তাই আমি ও আমার সহকর্মীদের নিয়ে সৎকারের কাজ সম্পন্ন করেছি। আমরা প্রত্যেকেই মানুষ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের কাজ সে জীবিত অবস্থায় হোক কিংবা মৃত অবস্থায়। ভুলে গেলে চলবে না ——-অংহকার, বিলাসিতা, হিংসা কিংবা বিদ্বেষ, যে যাই রথী মহারথী হোক না কেন চিতাতেই সব শেষ!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here