সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং :-

দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আগে সুন্দরবনে রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য মাতলা সেতুর উপর শুধুমাত্র রেল ব্রীজ তৈরির জন্য বেশ কিছু পিলার তৈরীর কাজ হয়ে থমকে রয়েছে।থমকে রয়েছে ক্যানিং থেকে ঝড়খালী পর‌্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ। রেল মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে ক্যানিং থেকে ঝড়খালী পর‌্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য সার্ভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হলে বৃহত্ এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহনের দায়িত্ব দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী রেল মন্ত্রকের। যদিও রেলের তরফ থেকে এমন কোন নির্দেশ আসেনি বলে দাবী দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের। ফলে কবে এই রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ  ফের শুরু হবে  বা আদৌ হবে কি না তা নিয়েই সংশয় দানা বেঁধেছে।

গত ২০০৮ সালে তত্কালীন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সুন্দরবনে রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য সুন্দরবনবাসী তাদের আবেদন পত্র তুলে দেয়। তত্কালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করে সুন্দরবনে রেলপথ সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন সোমনাথ বাবু। ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হওয়ার পর সুন্দরবনবাসীর আবেদন মেনে ক্যানিং থেকে সুন্দরবনের ক্যানিং-ভাঙনখালী ও পরে ঝড়খালী পর‌্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প ঘোষণা করেন। রেল বাজেটে এই কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দও করেন তিনি। মাতলা নদীর উপর সেতু নির্মাণ দিয়ে শুরু হয় এই রেল সম্প্রসারন প্রকল্পের কাজ। প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতলা নদীর উপর গোটা কুড়ি কংক্রীটের পিলারের খুঁটি তৈরি ছাড়া গত ১৫ বছরে আর কোন রকম কাজের অগ্রগতি হয়নি এই প্রকল্পের। যদিও গত ২০১৮ জুলাই মাসে রেল দপ্তরের তরফ থেকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। ক্যানিং থেকে ঝড়খালি পর‌্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য সার্ভের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহন করা করা প্রয়োজন। আর সেই জমি অধিগ্রহণের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যদিও রেল মন্ত্রকের এই দাবী মানতে নারাজ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন।

বিশ্ব পর‌্যটন মানচিত্রে বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। কিন্তু সমতলে অবস্থিত হলেও নদীনালা বেষ্টিত সুন্দরবনে যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে প্রথম থেকেই। ২০১১ সালে মাতলা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে তত্কালীন বাম সরকার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে সড়ক পথের মাধ্যমে জুড়ে দেয়। কিন্তু সমগ্র সুন্দরবনের মানুষ দাবী তুলেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় রেলপথের।আর সেই দাবী মেনে তত্কালীন কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে ক্যানিং ঝড়খালী রেল সম্প্রসারণের কাজ। বিশেষ করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য গত ৮ বছরের বেশী সময়ে একটি টাকাও বরাদ্দ করেনি। ফলে এগোয়নি এই প্রকল্পের কাজ। সুন্দরবন অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে তাই ট্রেন ধরার জন্য সুন্দরবনের গদখালী, ঝড়খালী, সরবেড়িয়া থেকে আসতে হয়ক্যানিংয়ে। এই এলাকার সমস্ত মানুষজন চাইছেন অতি শীঘ্রই রেল সম্প্রসারণের কাজ শুরু হোক।

এ বিষয়ে সুন্দরবনে রেল সম্প্রসারণের প্রধান উদ্যোক্তা সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য লোকমান মোল্লা বলেন,  ২০০৮ সাল থেকে এই রেল সম্প্রসারণ নিয়ে লড়াই করছি আমরা। বিগত কেন্দ্রীয় সরকারের রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী,রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ প্রভু থেকে শুরু করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছেও দরবার করেছি। চিঠি দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও। অথচ  কি কারণে কাজ থমকে রয়েছে  তা অজ্ঞাত। আমাদের বিশ্বাস সুন্দরবনবাসীর দাবী মেনে রেল সম্প্রসারণ ঘটবে সুন্দরবনের বুকে। আর যদি তা না হয় তাহলে আগামী দিনে সমগ্র সুন্দরবনবাসীকে সাথে নিয়ে আমরা পথে নামবো।

অন্যদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্কর দাবী করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার‌্য সুন্দরবনের বুকে একাধিক ব্রীজ স্থাপন করে সুন্দরবনের এক দ্বীপ থেকে অন্যদ্বীপে যাওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। তত্কালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বললেন আমিও কাজ করতে পারি। তড়িঘড়ি মাতলা নদীর উপর রেলব্রীজের কাজ শুরু করে দিলেন। বর্তমানে সেই রেলব্রীজের কয়েকটি পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে।

বাসন্তীর বিজেপি নেতা বিকাশ সরদার জানিয়েছেন, রেলব্রিজ কেন কোন উন্নয়ণ বাংলায় করতে পারেনি তৃণমূল। শুধু চপ শিল্প, খেলা শিল্প, কাটমানি নিয়ে শেষ করে দিয়েছে বাংলাকে। রেলব্রিজের জন্য কেন্দ্র টাকা দিলেও রাজ্যে সরকারের দায়িত্ব জমি অধিগ্রহণ করা। ফলে রাজ্য সরকারের গাফিলতিতেই রেলব্রীজ আটকে রয়েছে। তারপর বর্তমানে বাসন্তীর বিধায়ক হয়েছেন শ্যামল মন্ডল। তিনি এতোবেশি উন্নয়ন করেছেন যে, ক্যানিং পশ্চিমের মানুষ তাঁকে প্রত্যখ্যান করেছে। এবার বাসন্তীর বিধায়ক হয়েছেন,শুধুই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। তাছাড়া আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি যদি উন্নয়ন করতে হয় রেলব্রীজ করে দেখিয়ে দিন। সেটা কিন্তু তিনি পারবেন না।

বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মন্ডল বলেছেন কেন্দ্রের গাফিলতিতেই বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা,বঞ্চিত হচ্ছে সুন্দরবন। বিগত রেল বাজেটে মাতলা রেলসেতু নিয়ে মাত্র এক টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে করে প্রকল্পটি ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।তবে সুন্দরবনের মানুষ যাতে উপকৃত হয় তার জন্য আগামী দিনে আমরা রেলব্রীজ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করবো।

অন্যদিকে ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাস জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন মাতলা ব্রীজের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। পরবর্তীকালে মুকুল রায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখনও বেশকিছু কাজের অগ্রগতি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে কেন্দ্র সরকার এবং রেলমন্ত্রীকে একাধিকবার জানানো স্বত্ত্বেও রেল সম্প্রসারণের কাজ হয়নি। থমকে পড়ে রয়েছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য না সুন্দরবনবাসীদের অবহেলিত পথে ঠেলে দেওয়ার জন্য ক্যানিং-ঝড়খালি রেলপথ সম্প্রসারণে কাজ থমকে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।যদিও সমগ্র সুন্দরবনবাসী অধীর অপেক্ষায় চাতকের মতো তাকিয়ে কবে সুন্দরবনের বুকে রেলপথ সম্প্রসারণে কাজ শুরু হয় সেই দিকেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here