সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং -চলছে করোনার তান্ডব। লকডাউনে জেরবার সাধারণ মানুষ।পৃথিবীর বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছি। সেখানে হাজার হাজার যৌনকর্মীরা লকডাউনে কাজকর্ম হারিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। কখনও অর্ধাহার আবার কখনও বা অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।এমন করুণ কাহিনীর কথা কলকাতার ইমামবক্স লেনের ‘আমরা সবাই স্পোর্টিং ক্লাব’ এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সমাজসেবী খোকন মন্ডলের কানে পৌঁছায়।খোকন ও তার অন্তরঙ্গ বন্ধু অর্পণ দাস পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে রবিবার রাতেই প্রত্যন্ত সুন্দরবন থেকে হাজীর হয় সোনাগাছির যৌনপল্লিতে। সেখানে ওই ক্লাব ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী-শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বয়ং শশী পাঁজার সহযোগিতায় সোনাগাছির পতিতা পল্লির অসংখ্য যৌন কর্মীদের হাতে ত্রাণ তুলে দেয় খোকন মন্ডল।অসময়ে অসহায় যৌনকর্মীরা প্রতিবন্ধী যুবকের হাত থেকে এমন ত্রাণ পেয়ে খুশি।
খোকন মন্ডলের এমন মানবিকতা কে প্রশংসা করে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন “প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকা থেকে খোকন যেভাবে প্রান্তিক অসহায় যৌনকমীদের সাহায্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তা কোন ভাবেই মূল্যায়ণ করা যায় না। খোকন আগামী দিনেও এমন কাজ সমগ্র রাজ্য জুড়ে চালিয়ে যাক সেই আশা করবো। আমরা খোকনের এমন মানবিক কাজের পাশে রয়েছি,আগামী দিনেও থাকবো। ”
উল্লেখ্য খোকন মন্ডল। প্রতিবন্ধী এক যুবক। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম জীবনতলা মঠেরদিঘীর বাসিন্দা। আট ভাইবোনের মধ্যে অষ্টম গর্ভের সন্তান খোকন মন্ডল।মাত্র তিন বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে দুটি পা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিল।প্রতিবন্ধী তকমাটা সেই থেকেই ধার্য্য হয়েছিল খোকনের।প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের কাছে উপহাস্যের পাত্র হয়ে দিনের পর দিন কাটতে হয়েছিল প্রতিবন্ধী ওই যুবক কে।আদতে প্রতিবন্ধী হলেও হার মানতে রাজী নয়। অদম্য জেদ কে হাতিয়ার করে মাষ্টার ডিগ্রী করে নেমে পড়েন সোশ্যাল কাজে।তখনও ওই প্রতিবন্ধী যুবক কে চিট ফান্ডের এজেন্ট তকমা লাগিয়ে উপহাস্যের পাত্র করে তুলেছিলেন সাধারণ মানুষ।সে সমস্ত উপহাস্য কে কোন প্রকার কর্ণপাত না করে খোকন তার নিজের কাজে অবিচল থাকে। এলাকার মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করতে থাকেন। ২০১১ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তোলেন মঠেরদিঘী পল্লি সেবাসদন নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার হাত ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে অষ্টম গর্ভের সন্তান খোকন মন্ডল।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।বিশেষ করে করোনা মহামারীর শুরু থেকে সুন্দরবনের উপর আছড়ে পড়া ফণি,বুলবুল,আম্ফান সাইক্লোন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হাজার হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে।
খোকনের এমন সামাজিক কাজকে আরো বেশি করে উদ্বুদ্ধ করে সুন্দরবন সহ সমগ্র রাজ্যজুড়ে সামাজিক কাজ করার জন্য ২৪ ঘন্টা সহযোগিতা করে পাশে দাঁড়িয়েছে অর্পণ দাস,নিউটন সরকাররা।
খোকন মন্ডল জানিয়েছে “ছোট থেকে অভাব কে সঙ্গী করে মানুষ হয়েছি। অসহায় দরিদ্র মানুষের কথাটা বুঝি। কষ্টের কথা শুনলে মনটা কেঁদে ওঠে চেষ্টা করি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি মাত্র”।