উত্তর প্রদেশের কানপুরের বেহমাই গ্রামে ফুলন দেবী ও তার বাহিনীর হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের চার দশক পর স্থানীয় আদালতের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার কানপুরের স্থানীয় আদালত শেষ দুই জীবিত অভিযুক্তের একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই অভিযুক্তের নাম শ্যাম বাবু। বিচারক অমিত মালবিয়ার আদালত শ্যাম বাবুকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন কিন্তু প্রমাণের অভাবে অপর অভিযুক্ত বিশ্বনাথকে খালাস দিয়েছেন বলে সরকারপক্ষের আইনজীবী রাজু পোরওয়াল জানিয়েছেন। রাজু পোরওয়াল বলেন, ফুলন দেবীসহ মোট ৩৫ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছিল। শ্যাম বাবু ও বিশ্বনাথ ছাড়া বাকি সবাই মারা গেছেন।

১৯৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফুলন দেবী এবং তার দল ধর্ষণ ও অন্যান্য অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে কানপুরের রাজপুর থানা এলাকায় অবস্থিত বেহমাই গ্রামে ২০ জনকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন উচ্চবর্ণের ঠাকুর সমাজের মানুষ ছিলেন। ঠাকুর সমাজ ও উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা কোনো কারণ ছাড়াই ফুলন দেবীকে একটি ঘরে আটকে রেখে টানা কয়েক দিন ধর্ষণ করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই ফুলন দেবী ডাকাত দলে যুক্ত হয়ে ২০ জনকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর ফুলন দেবী আত্মসমর্পণ করেন। তবে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতে অত্যাচারিত, দলিত, নিম্ন বর্ণের মানুষ ও আদিবাসীদের প্রতিবাদের মুখ। তাকে নিয়ে বিশ্বে তৈরি হয় চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেছিলেন শেখর কাপুর।

১৯৯৪ সালে সমাজবাদী পার্টির তৎকালীন প্রধান এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের আদেশে ফুলন দেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের মির্জাপুরের এমপি হিসেবে লোকসভায় নির্বাচিত হন। নিরক্ষর হলেও তার রাজ্য ও কেন্দ্রে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন ফুলন দেবী। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই তাকে নয়াদিল্লিতে সরকারি বাসভবনের বাইরে হত্যা করা হয়। যাদের ফুলন দেবী হত্যা করেছিলেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেই চালানো হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here