ওঁঙ্কার মিত্র : এই জাগতিক পৃথিবীতে মহামারির নতুন উপকরণ করোনা বা কোভিড গত দুবছর ধরে যে বৈচিত্রতায় রূপ বদলে ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলেছে সেই বৈচিত্র নিয়েই পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে রাজনীতি নতুন নতুন কৌশলে। প্রথম দিকে বিধি পালন, ত্রানবন্টন, সংক্রমণ আর মৃতু্যর পরিসংখ্যান নিয়ে আকচা আকচির পর এসেছে উত্সব। সব কিছু থেকেই রাজনীতির নির্যাস শুষে নিতে দ্বিধা করেন নি রাজনীতিকরা। চিকিত্সকরা যখন ঘরে থাকার চরম হুশিয়ারি দিচ্ছেন তখন একটু-আধটু ছাড় দিয়ে জনগণের মন ভোলানোর চেষ্টা করেছেন রাজনীতির কারবারীরা। দুর্গাপুজোয়, ঈদুজোহায়, বড়দিনে রাস্তায় বাঁশ বেঁধে, প্যান্ডেলের সামনে দড়ি খাটিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে আমরা তৈরি, তোমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরোলে আমরা খুশি। আর একেই এক স্বাস্থ্যকর্মী আখ্যা দিয়েছেন স্টেট স্পনসর্ড টেরোরিজম অন পাবলিক হেল্থ। এভাবেই এসেছে রাজনীতিকদের সবচেয়ে প্রিয় ভোট উত্সব। মিটিং-মিছিল-জনসভা হয়েছে নির্বিবাদে। থার্মাল গান, একটু স্যানিটাইজারের ছোঁয়া আর একটা চিকচিকে গ্লাভসের ভরসায় ভোটের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে আঠারো থেকে আশিকে। উত্সব বলে কথা, আমরাও কেউ কেউ গা ভাসিয়ে দিয়েছে দাদা-দিদিদের ভরসায়। পরে অক্সিজেনের জন্য ছুটোছুটি। হাসপাতালে বেডের জন্য হয়রানি। এখানেও দাঁড়িয়ে আছে রাজনীতি তার বদান্যতা নিয়ে। মন্ত্রী-কাউন্সিলর বা দাদাদিদি নেতার একটু রেকমেন্ডেশন পেলে বর্তে যাওয়া। কিছু না পেলে শ্মশানে দাদা বলে দেবেন, ভিআইপি চুল্লি পেতে অসুবিধা হবে না।
সেই ২০২০-র জানুয়ারি নয়, এখন ২০২২-এর জানুয়ারি। আমরা এখন দীর্ঘ দু বছরের কোভিড অভিজ্ঞতায় ভরপুর। আমরা এখন জেনে গেছি চিকিত্সকরা যাই বলুন রাজনীতিকরাই সব। তারাই বরাদ্দ করবেন বিনাপয়সার চাল, ডাল, ব্যাঙ্কে অনুদান পাঠাবে তারাই। আবার আক্রান্ত হলে তাদের ধরেই ওষুধ। বেড, চুল্লি পেতে হবে। তাই সার বোঝা মানুষ নির্দ্বিধায় পার্ক স্ট্রিটে রাত কাটাচ্ছে, চিড়িয়াখানা, জাদুঘরে, ভিক্টোরিয়ায় শীত উপভোগ করছে। কেনাকাটা করছে ভিড়ে ঠাসা নিউমার্কেটে। সরকার ঠিক ঝোপ বুঝে বড়দিন আর বর্ষশেষের উত্সবের আগের রাতের কোভিড বিধি শিথিল করে নেমে পড়েছে স্পনসর করতে। এই মহামারির দুনিয়ায় জনগণ ও রাজনীতিক এই দুইই সত্য। আর ওষুধপত্তর, চিকিত্সা সবই মায়া, দুদিনের বই নয়। কোভিড তো সাময়িক, উত্সব চিরকালের। তাই মাভৈঃ উত্সব যার যার, কোভিড সবার।