নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যে চলছে গণটিকাকরণ অভিযান। ব্লকে, পঞ্চায়েতে পুর ওয়ার্ডে কোঅর্ডিনেটর, প্রধান, বিডিও বা তাদের প্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে চলছে টিকা প্রদান। অথচ যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে টিকা পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ। অভিযোগ একটাই বহুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না ভ্যাকসিন, এমনকি কো-উইন অ্যাপে বুক করলেও টিকা পাওয়া নিশ্চিত নয়। সরকার পক্ষ দুষছে কেন্দ্রকে যথেষ্ট সংখ্যক টিকা বরাদ্দ না করার জন্য। আবার বিরোধীদের দাবি টিকা প্রদান চলছে প্রধান কোঅর্ডিনেটরদের ইচ্ছা মতো। তাঁরা যাদের কুপন দেবেন তারাই পাবে টিকা। এক্ষেত্রে পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে বিরোধী দল করা লোকজন থেকে বিরাগভাজন ব্যক্তিরা। অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারেরই লক্ষ্য সকলের টিকাকরণ। তবু গত সপ্তাহে টিকা বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল দুই পরগণার বিভিন্ন এলাকা। টিকাকরণ লাইনে ধ্বস্তাধস্তির জের ১১ জন পদপিষ্ঠ হলেন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির কালীনগরে। ট্রাক ভাঙচুর করে পথ অবরোধে সামিল হয় অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ৮ নং মোড় এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশকে লাঠি পর্যন্ত চালাতে হয়েছে। পুরপ্রশাসক জানিয়েছেন ডাকা হয়েছে দুশো জনকে, পোর্টালে কারা নাম নথিভুক্ত করেছে তার তথ্য তাঁর কাছে ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে ডাকা হয়েছে কাদের? পুরপ্রশাসকের ইচ্ছামত না কোনো নীতি মেনে? অথচ স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেছেন যারা টিকাকরণ করছেন তাদেরই দায়িত্ব নিয়মিত পোর্টালে নজর রাখা। অর্থাত্ পুরপ্রশাসক ও স্বাস্থ্যদফতরের দুই ভিন্ন মতের বলি হল সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ভ্যাকসিন না পেয়ে বিক্ষোভ হল ভাঙড় ২ ব্লকের জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালেও।
সেখানকার স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন ভুল বোঝাবুঝিতে এই বিক্ষোভ। এদিন শুধু দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা থাকলেও এলাকার বাইরের কিছু লোক প্রথম ডোজের জন্য ভিড় করেন তাঁরাই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কাদের বেছে বেছে টিকা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে বিস্তর প্রশ্ন। শুধু এই দুই জেলাতেই নয় ছোটখাটো টিকা বিক্ষোভে প্রায় প্রতিদিনই উত্তাল হচ্ছে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকা। ছোটখাট বিক্ষোভ মিটে যাওয়ায় সংবাদে উঠে আসছে না তুষের আগুন। কিন্তু কেন এত বিক্ষোভ? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে টিকা প্রদানে একটি সুষ্ঠ ও অভিন্ন নীতি প্রণয়ণের দরকার ছিল সরকারের। প্রত্যেক টিকা প্রদান কেন্দ্রে একই নিয়ম মেনে টিকা দিলে এবং সেই নিয়ম সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হয়ে থাকলে বিক্ষোভের কোনো অবকাশ থাকত না। সুযোগ থাকত না টিকার কুপন নিয়ে দাদাগিরি করার। গণটিকাকরণ যদি ১০০ শতাংশ সফল করতে হয় তাহলে সরকারকে নীতি প্রণয়ন করতেই হবে দাবি বিশেষজ্ঞদের। অন্যথায় এমন বিক্ষোভ বাড়তেই থাকবে।