Home Uncategorized সুন্দরবনে পালিত হল এক ভিন্ন স্বাদের আর্ন্তজাতিক নারী দিবস

সুন্দরবনে পালিত হল এক ভিন্ন স্বাদের আর্ন্তজাতিক নারী দিবস

0

সুভাষ চন্দ্র দাশ,সুন্দরবন : দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবনের অত্যন্ত পিছিয়েপড়া বাসন্তী ব্লকে এক ভিন্নস্বাদের “আর্ন্তজাতিক নারী দিবস” পালিত হল।শুক্রবার সকালে বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জে নারী আধিকার,নারী স্বাধীনতার দাবীতে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পাঁচশোর অধিক মহিলারা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রমে মিলিত হন। সাথে ছিল পিছিয়েপড়া,বঞ্চিত কিশোরী মেয়েরাও। 
মুলত তাঁদের দাবী ছিল নারীপাচার,শিশুপাচার বন্ধ হোক এবং নাবালক নাবালিক বিবাহ রুখছি রুখবো।শুক্রবার প্রত্যন্ত সুন্দরবনে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তা ছিলেন বাসন্তী ব্লকের “চম্পা মহিলা সোসাইটি” ও “বাসন্তী মহিলা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড”।মহিলারা আগামীতে এগিয়ে যেতে চায়,স্বনির্ভর হতে চায় কিন্তু প্রতি মুহূর্ত কঠিন বাধা ও অন্তরায়।অনবরত চলছে নারী নির্যাতন বধুহত্যা পাশাপাশি ঘরে বাইরে মহিলাদের নানান সমস্যার মাঝে পড়ে জর্জরিত হতে হয়। বিশেষ করে সুন্দরবনের বাসন্তী, গোসাবা ব্লকে হাজার হাজার মায়েদের অগ্রগতির পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। পুরুষ হয়েও মহিলা উন্নয়নে ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছেন,তিনি হলেন বাসন্তী হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা সমাজসেবী শিক্ষারত্ন অমল নায়েক।গ্রাম্য এলাকায় কাজ করার নিরীখে চোখের সামনে অজস্র বধুহত্যা,নারী নির্যাতন দেখেছেন।থেমে থাকেনি তাঁর অদম্য লড়াই।১৯৮১ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের নামে গঠন করেন “চম্পা মহিলা সোসাইটি স্বনির্ভর” দল । এই স্বনির্ভর দলটি আধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই শুরু করে।পাশে পেয়ে গেলেন নিলিমা বেরা, সন্ধ্যা রানি দাস, কপাল কুন্দলা লস্কর,সুনিতা মজুমদার, সঞ্চিতা হালদার, ও তাঁর স্ত্রী মমতা নায়েক কে।পরবর্তী কালে প্রায় তিন বছর বিরামহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গঠন করলেন “বাসন্তী মহিলা কো-অপরেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড”।বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার “মা” আর্থিক স্বাবলম্বী।সুন্দরবন তথা জেলা ও রাজ্যের ক্ষেত্রে এই সমবায় ব্যাঙ্ক মহিলাদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্থ নজির গড়েছে। 
এরপর অমল বাবু ২০০৯ সালে তৈরি করেন “মা চম্পাবতি বালিকা আশ্রম” সেখানে সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া মেয়েরা পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে। মৎস্যজীবী ও মধু সংগ্রহ কারীরা মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ও মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে যে সমস্ত মৎস্যজীবি মারা গিয়েছেন,বর্তমানে তিনি সুন্দরবনের সেই সকল পরিবারের বিধবা মা ও তাঁদের অর্ধ অনাথ সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যবাসীর কাছে আওয়াজ তুলেছেন ‘সেভ টাইগার এ্যাফ্যাক্টেড ফ্যামিলি’।ব্যাঘ্র বিধবা মায়েদের স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। 
এদিন আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে কয়েকজন মহিলা নেত্রী বলেন অমল স্যারের মতো মানুষ পেয়ে আমরা এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছি,আজ মেয়েদের  মুখে হাসি ফুটেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য্য,ভাষ্কর পাল সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা।এদিন অনুষ্ঠানে আশ্রমের মেয়েদের নাচ,গানে অনুষ্ঠান মঞ্চ মুখরিত হয়ে ওঠে। আর্ন্তজাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠান আরও প্রানোজ্জ্বল হয়ে ওঠে যখন সম্মানীয় অতিথীবৃন্দের হাত থেকে বাসন্তী ব্লকের মহিলা দর্জি লিপিকা শিকদার,প্রাণীপালক হবিজা লস্কর,ফুটপাথে ফল ব্যবসায়ী বাসন্তী বর,চা বিক্রেতা রশিদা মোল্লা,সবজি বিক্রেতা বুলবুলি বর,পালন্ত সরদার,সবিতা সরদার,কণিকা মন্ডল সহ ১৫ জন মহিলা যখন সম্মান গ্রহণ করেন। পাশাপাশি শিবগঞ্জ বাজারের ফুটপাথের বেশ কয়েকজন মহিলা সবজী বিক্রেতা  এবং সুন্দরবনের ব্যাঘ্র বিধবা মায়েরা তাঁদের কন্যা সন্তানদের শাড়ি বেডসিট,মসারি এবং শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সম্মানিত করা হয়।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সম্মান পেয়ে মহিলারা জানিয়েছেন, “আমরা প্রতি মুহূর্তে জীবন সংগ্রামে লড়াই করে চলেছি।আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে সম্মানিত হতে পেরে ভীষণ খুশি।  ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি একজন পুরুষ হয়েও দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত অমল স্যার যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোন তুলনা হয় না। আমরা তাঁর জন্য আজ জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে এগিয়ে গিয়ে বেঁচে থাকার স্বাদ পেয়ে আনন্দিত।’  

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version