নিজস্ব প্রতিনিধি, গোসাবা: ক্যানিং মহকুমার গোসাবা-বাসন্তী হোক বা কাকদ্বীপের নামখানা-পাথর প্রতিমা কিংবা বারুইপুরের কুলতলি, নোনা জলের ধাক্কায় ভেঙে পড়া বাঁধই এখন কঠিন বাস্তব সমগ্র সুন্দরবন এলাকা জুড়ে। যে সুন্দরবনবাসী পর্য টকদের নিয়ে সারাদিন মেতে থাকে, অপার সমুদ্রে পাড়ি দেয় মাছের আশায়, গহন অরণ্যে ছুটে যায় মধু আর কাঁকড়া আহরণে তারা এখন ভাঙা বাঁধ আর ভেসে যাওয়া সংসারের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছে ফের জীবনে ফেরার। এরই মধ্যে কেউ ফিরছেন নিজের ভিটেতে, কেউ আবার কোনও রকমে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছেন দুমড়ে যাওয়া মাটির ঘর। শুরু হয়েছে সরকারি ত্রিপল আর রান্না করা খাদ্য বিতরণ। ঝাঁপিয়ে পড়েছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। সরকারের পাশাপাশি তারাও খাদ্য সামগ্রী ও জামাকাপড় নিয়ে চেষ্টা করছে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবার। শুরু হয়েছে পুনর্বাসনের কাজও। সেচ দফতরের কর্মীরা নেমে পড়েছেন বাঁধ মেরামতির কাজে। কোনও কোনও জায়গায় মূল বাঁধের পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে আরও একটা মাটির বাঁধ দ্বিতীয় প্রহরী হিসাবে। শুরু হয়েছে দুয়ারে ত্রাণের আবেদন জমা নেওয়ার কাজ। এক সরকারি আধিকারিক জানালেন, আবেদনপত্র গ্রহণের কাজ চলবে আগামী ১৮ জুন পর্যরন্ত, তারপর খতিয়ে দেখা হবে ক্ষতির পরিমাণ।সেই মতো বরাদ্দ হবে ক্ষতিপূরণের অর্থ। প্রশাসনের এত তত্পরতার মাঝে প্লাবিত বাঁধের দিকে চেয়ে সেই অমোঘ প্রশ্নটা করলেন বহু ভাঙন দেখা প্রবীণ গোসাবাবাসী- কিন্তু এরপর? সামনে আসছে আরও একটা কোটাল, আসছে বর্ষা, ততদিনে আমরা বাঁচবো তো? ক্ষতিপূরণ পেতে পেতে আবার একটা ক্ষতির মুখে হয়তো শেষ হয়ে যাবে শেষ বাঁধনটাও। বৃদ্ধের কথায় নোনা জল বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর। থাবা বসালে আর রক্ষা নেই। নোনা জল ছোবল মারে দুবার। একবার ঢোকার সময়, আর একবার বেরোবার সময়। দুই ছোবলে ভেসে যায় মাটির ঠুনকো বাঁধের আগল। একই আশঙ্কায় ভুগছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি ১১ ও ২৬ জুন-এ সামনের দুটো কোটাল নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন বাঁধ মেরামতির। ছল ছল চোখে পরিবারের মাঝে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধটি জানালেন, বড় দেরিতে চোখ খুলল গো বাবু। রোদের তেজে বাঁধে দেওয়া নতুন মাটি যদি বসে যায় তবে রক্ষে না হলে ফের ভেসে যেতে হবে অজানা জীবনে।