শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে শেষ জীবন কাটাতে বদ্ধ নিঃসন্তান পরিবার

0
88

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – নিঃসন্তান দম্পতি! ভগ্নপ্রায় হৃদয়কে সান্ত্বনা দিতেই পাড়ায় পাড়ায় ফেরিওয়ালার কাজ করেন।হৃদয় কে সাত্ত্বনা দিতে যখন যে গ্রামেই জিনসপত্র ফেরি করার জন্য যায় সেখানে শিশুদের দেখতে পেলে দুনয়ন বেয়ে অশ্রুবারি ঝরে পড়ে,সেখানেই শিশুদের হাতে খাবার তুলে দিয়ে নিজের ভগ্ন হৃদয় কে তৃপ্ত করেন ফেরিওয়ালা সাইফুদ্দিন মোল্লা।ফেরিওয়ালার কাছ থেকে প্রায় প্রতিদিনই খাবার পেয়ে খুশিতে ডগমগ শিশুরা। মাইকের আওয়াজ পেলেই দৌড়ে আসে সাইফুদ্দিনের কাছে।
জানা গিয়েছে, প্রায় বছর ৬০ বয়সের সাইফুদ্দিন পেশায় দীনমজুর। গত প্রায় ৪০ বছর আগে ক্যানিংয়ের গোপালপুর পঞ্চায়েতের বদুকুলা গ্রামের রোকেয়া কে বিয়ে করেন।বিয়ের বছর চারেক পর দম্পতির কোন সন্তান না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় বিভিন্ন বদ্যি,কবিরাজ,ওঝা,গুণীনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সন্তান পাওয়ার আশায়।সমস্তটাই বৃথা হয়।পরবর্তী সময়ে এলাকারই দুই শিশু কন্যা কে দত্তক নিয়ে নিজের সন্তানের মতো বড় করে তুলেছিলেন। প্রাপ্ত বয়স হওয়ায় তাদের কে দেখাশোনা করে বিয়েও দিয়ে দেয় সাইফুদ্দিন।দত্তক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পর আবারও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে দম্পতি।দুঃখ শোক গ্রাস করতে থাকে।বছর দুই আগেই দীনমজুর পেশা কে পরিবর্তন করে।শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করার কাজ।কাজের সুত্রে নিঃসন্তান সাইফুদ্দিন জীবনে দুঃখ শোক ভুলে আনন্দে থাকার রসদ পেয়ে যায়। প্রতিদিনই ফেরি করার সময় পাড়ার শিশুদের সাথে মিশে একাত্ম হয়ে ওঠে। আনন্দের পাশাপাশি নিজের আয়ের একটা বড় অংশ শিশুদের জন্য ব্যয় করেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার শিশুদের হাতে খাবার তুলে দেয়।প্রথম দিকে গ্রামের সাধারণ মানুষজন এমন কাজ কে ভালো চোখে নেননি। যদিও পরবর্তী সময় সাইফুদ্দিনের জীবন কাহিনী শুনে তার কাজে কেউ আর বাধা দেয়নি।
এলাকার কুতুবুদ্দিন মোল্লা,স্বপন হালদার,মহিনুদ্দিন সেখ ও বাপি মন্ডলদের দাবি,সাইফুদ্দিন যে শোকে আক্রান্ত তা বহিঃপ্রকাশ করার মতো নয়।আমরা জানতে পারার পর তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি।পাশাপাশি যে ভাবেই শিশুদের সাথে মিশে বাকি জীবন কাটাতে পারে তারজন্য সহযোগিতা করেছি।
সাইফুদ্দিনের কথায়,জীবনে কিছুই পেলাম না।প্রষ্ফুটিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে শেষ জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমার যতটুকু অর্থ রয়েছে তা ভবিষ্যতে কিছুই হবেনা। ফলে আগামী প্রজন্মের শিশুরা যাতে হাসিমুখে বড় হতে পারে, তারজন্য ফেরির কাজ করার পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি দেখার জন্য আমার এই প্রচেষ্টা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here