নিজস্ব সংবাদদাতা : বিয়ের পরে দুটি পথ। হয় সুখী, নইলে দার্শনিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে মনে হয় দার্শনিকের সংখ্যাই বেশি। যদিদং হৃদয়ং মম মন্ত্র আর গাঁটছড়া বাঁধার সঙ্গে সুখী হওয়ার মন্ত্রটাও যদি দিয়ে দেওয়া যেত তাহলে হয়তো এত পরিবারের ভাঙ্গন হত না। সেই মন্ত্রই দিচ্ছেন শ্রী নিতাই দাস। আইআইটি থেকে প্রযুক্তিবিদ হয়েছেন। তবে বেছে নিয়েছেন আধ্যাত্মিক পথ। যুক্ত হয়েছেন ইসকনের সঙ্গে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম তাঁকে যন্ত্র গড়ার কারিগরি বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে করেছে সুখী মানুষ গড়ার কারিগর। তাই তিনি লিখেছেন ‘দ্য স্যাক্রেড নট’ নামের বইটি। রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, যেটি প্রকাশিত হল নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে।
গাঁটছড়া বাঁধনের সময় যে উচ্ছ্বাস থাকে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থায়ী হয় না। জীবনে সেই আনন্দ ধরে রাখার পাঁচটি উপায় বলে তা ব্যাখ্যা করেছেন শ্রী নিতাই দাস। নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বৈবাহিক জীবনকে দেখেছেন তিনি। আলোকপাত করেছেন সুখী দাম্পত্যের উপরে।
সময়ের সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছ। সমাজও বদলেছে। ঘরে-বাইরে কাজের ধরন বদলেছে। প্রতিযোগিতা, চূড়ান্ত বৈপরীত্য আর ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিসর নিয়ে ক্রমাগত বেড়ে চলা দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে পরিবারেও। বিয়ের পরে পরিবার ছেড়ে স্বামী-স্ত্রীর নতুন আস্তানা খোঁজা যেন রুটিন হয়ে গেছে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও নিরাপত্তার যে ঐতিহ্য আমাদের সমাজে আবহমান কাল ধরে ছিল তার উত্তরাধিকার পাওয়ার উপায় আধ্যাত্মিক পথ। সেই পথই দাম্পত্যজীবনকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন উনি ।
বইটা শুরু হয়েছে অনেকটা এইভাবে, “বিয়ে বলতে সাধারণভাবে বোঝায় এটি দুটি হৃদয়ের গাঁটছড়ার বন্ধন যা পরস্পরকে উপলব্ধি ও গ্রহণ করার বিনিসুতোর বন্ধন।” তাহলে একে অপরকে মানিয়ে নিলে বৈবাহিক জীবনের সব দ্বন্দ্ব-বৈপরীত্য-লড়াই কি থেমে যাবে? বিয়ের অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই জীবন থেকে কেন দাম্পত্যপ্রেম হারিয়ে যায়? এমন প্রশ্ন তুলেছেন লেখক নিজেই। তারপরে দাম্পত্য জীবনের মূল তিনটি মৌলিক প্রযোজন ব্যাখ্যা করে সমাধানের পথও দেখিয়েছেন। সারা জীবন ধরে ত্যাগ স্বীকার আর মিলেমিশে থাকতে থাকতে জীবনটাকে বোঝা করে ফেলা এর সমাধান নয়, সুখী দাম্পত্যের জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিকতা। গৃহীর নিজস্ব ধর্ম আছে, সেই পথেই তারা আনন্দের সন্ধান করতে পারে। দাম্পত্য জীবনের অঙ্গ হল সন্তানকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে সঠিকভাবে লালনপালন করা, সমাজজীবনে সক্রিয়তার মাধ্যমে মাথা উঁচু করে বাঁচা আর জীবনকে এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে নিজের মধ্যে থাকা ঐশ্বরিক ভাবের প্রতিফলন ঘটানো যায়।
আইআইটি খড়্গপুর থেকে ইলেকট্রনিক্স ও ইলেক্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন শ্রী নিতাই দাস। গত এক দশক ধরে অনুপ্রেরণা প্রদানকারী সেমিনার ও তাঁর লেখা বই অসংখ্য মানুষকে প্রেরণা দিয়ে আসছে। দাম্পত্য জীবন কীভাবে সুখের হয় এবং সেই জীবনে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এব্যাপারে তিনি বহু মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। তাঁর আগের লেখা বই দুটি হল, ‘সিক্রেট সূত্রাস অফ এ সাকসেসফুল, স্ট্রেস-ফ্রি অ্যান্ড স্যাক্রেড লাইফ’ ও ‘রেজোনেট উইথ ডিভিনিটি’। জীবনে প্রশান্তি ও ইতিবাচক ভাবে পূর্ণ সফল জীবনের বাস্তবিক অন্তর্দৃষ্টি ও গভীর জ্ঞানের সন্ধান রয়েছে এই দুটি বইয়ে।