Home Uncategorized বিদায় আষাঢ়, তবু মৌসুমী এল না ঘরে

বিদায় আষাঢ়, তবু মৌসুমী এল না ঘরে

0

ওঙ্কার মিত্র : একুশ আর বাইশ-এ বিস্তর তফাত। গত বছর বর্ষা এসেছিল রুদ্র রূপ ধরে, সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়ার সাইক্লোনের ভ্রূকুটি। অতিবৃষ্টির প্লাবন আর উত্তাল নদী-সমুদ্রের নোনা জলে ভরেছিল বাংলার ক্ষেত খামার। ফসল যেটুকু হয়েছিল তাও পচে পাঁক। দু-একটি জেলার সুবাদে বাংলা বেঁচেছে কোনওরকমে খেয়ে পরে। বাকিটা চলেছে অন্য রাজ্যের ভাণ্ডারে ভরসা রেখে। এসব গন্ডগোলের মাঝে মৌসুমী তার রোম্যান্টিক বর্ষা নিয়ে সেবার ঢুকতে সুযোগই পায়নি বাংলায়। আকাশ জোড়া কালো মেঘ, ঝমঝম-ঝিরিঝিরি বর্ষার রাবীন্দ্রিক ছন্দ মিস করেছে বাঙালি।

অপেক্ষা ছিল বাইশের। এবার আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ পড়ল, জুন গড়িয়ে জুলাই, তবুও বাংলায় ফিরল না বর্ষারাণী মৌসুমী। এবার তো ঝড়-ঝঞ্ঝার বাধা নেই, তবু সে মুখ ফিরিয়ে রইল কেন? যিনি উত্তর দেবেন আবহাওয়া দফতরের সেই অধিকর্তা গণেশবাবু নিজেই হতাশ। বলছেন, এমন দুর্বল বর্ষাই চলবে গাঙ্গেয় বঙ্গে। তবে ওড়িশা উপকূলে একটি নিম্নচাপের খবর শুনে অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা- এবার বুঝি হাজির হল বর্ষারাণী। কিন্তু সে আশায় জল ঢালতে হয়েছে নিজেদেরই। নিম্নচাপটি দক্ষিণ পশ্চিম ওড়িশার ওপরে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখাও। তাই ওড়িশা এবং মধ্য ভারতের একাংশে জোরালো বর্ষা মিলবে। বাদ যাবে শুধু বাংলার মাটি। মৌসম ভবনের হিসাবে ১ জুন থেকে ১২ জুলাই পর‌্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবে উত্তরবঙ্গে বর্ষা ছিল ৬০ শতাংশ উদ্বৃত্ত। সেটিও এখন ১৪ শতাংশে ঠেকেছে। উত্তরবঙ্গে এখন চলছে গরমের দাপট। গণেশবাবুদের চিন্তা এমন দুর্বল বর্ষা চলতে থাকলে বাংলায় বর্ষার ঘাটতি আরও বাড়বে।

গণেশবাবুদের বলি, এসব নিয়ে ভেবে ভেবে চিন্তায় শরীর খারাপ করবেন না। আশে পাশে শিউলি গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, শরতের শিউলি ফুটতে শুরু করেছে। নীল আকাশ আর কাঁচা রোদে কেমন যেন পুজো পুজো গন্ধ। অর্থাত্ তার নৈবেদ্যর ডালি সাজিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে প্রায় এসে গিয়েছে শরত্। রোদ-বৃষ্টির ভেজা মাটি থেকে শারদ আগমনীর গন্ধ ছড়াচ্ছে। অর্থাত্ গ্রীষ্মের পরে বাংলায় শরতের আগমন। মাঝখানে বর্ষা ডিলিট। এসব জটিল বাস্তব ভেবে মাথা চুলকিয়ে লাভ নেই গণেশবাবু। বরং পুরোনো আলিপুর বার্তায় চোখ বুলিয়ে ভৌগোলিক প্রয়াত প্রফেসর কাশীনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধগুলো পড়ুন, যেগুলি বর্তমানে এক ভবিষ্যত দ্রষ্টার মহার্ঘ দলিল হিসাবে আলিপুর বার্তার আর্কাইভে সঞ্চিত আছে। পড়ে দেখুন, কাশীবাবু নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন, থর মরুতে সবুজায়নের সরকারি প্রয়াস মৌসুমীর গতিপথ পাল্টে দেবে। এলোমেলো হয়ে যাবে সুজলা-সুফলা, শস্যশ্যামলা ভারতের চেনা আবহাওয়া। তিনি বলেছিলেন, মৌসুমীকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভারতভমে টেনে আনে থর মরুতে তীব্র তাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ। আজ ভারতের আবহাওয়ায় যা যা ঘটছে তা এক সফল জ্যোতিষীর মতো একের পর এক লিখে গিয়েছেন কাশীবাবু। কিন্তু সেই প্রবাদের অনুরণন, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আপনারা সরকারি পদের গরিমায় গর্বিত আবহাওয়াবিদরা রাজনীতিকদের কথায় সুর মিলিয়ে পাত্তাই দেননি কাশীবাবুর তত্ত্বগুলোকে। তাঁর কথাগুলি একবার খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেননি আপনারা। আজ আর চিন্তা করে, মাথার চুল ছিঁড়ে লাভ কি। আজও আপনারা বদলান নি। এখনও বছরের শেষে বর্ষার মোট পরিমাণ হিসাব করে টক জলের ঢেকুর তোলেন। ভাবেন বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে কেউ আপনাদের দেখতে পাচ্ছে না। বর্ষা মানে প্লাবন নয়, হালকা বৃষ্টির ঘাটতি নয়। বর্ষা তার নিজস্ব ছন্দে আমাদের মুখে গ্রাস তুলে দেয়। বছরের শেষে জলের পরিমাণ দেখে হিসাব কষলে হয় না।

এভাবেই ভারতবর্ষে বহু ভ্রান্ত পরিকল্পনা রাজনীতিক ও আমলাদের যুগলবন্দীতে রচিত হয়েছে যা ভবিষ্যত ভারতবাসীকে বিপদের সম্মুখীন করেছে। মরেছে ভারতবাসী, নেতা-আমলারা গুছিয়ে নিয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছে। বর্ষা নিয়েও ঠিক একই জিনিস চলছে। সরকার বর্ষা চুরি করেছে বললে অনেকেই চমকে যাবেন বটে- আসলে কিন্তু সেটাই সত্যি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version