বাংলার পদাবলী ‘কীর্তন’ ভারতীয় সংগীতের এমন একটি অধ্যায়, যার সাংগীতিক উপাদান, ভাষা, দর্শন এবং নান্দনিক আবেদন সবই অভিজাত শ্রেণীর। বর্তমানে বাংলা সংগীতের এই সুবিশাল সম্পদ সঠিক সংরক্ষণ ও চর্চার অভাবে শিক্ষিত ও রুচিশীল গুণগ্রাহীর কদর পায় না। সেই সব হারিয়ে যাওয়া , অপ্রচলিত উচ্চাঙ্গের কীর্তনকে জনসমক্ষে ফিরিয়ে আনার এক অভিনব উদ্যোগ হল ‘দরবারী পদাবলী’। মধ্যযুগের কবি জয়দেব রাজা লক্ষ্মণ সেনের দরবারে যে ‘গীত গোবিন্দম্’ এর পরিবেশনা করতেন, তার সুর-তাল ও কাঠামোর ভিত্তি ছিল প্রাচীন রাগ-রাগিনী ও গান্ধর্ব সংগীত থেকে জাত বিভিন্ন প্রবন্ধ গীতে ব্যবহৃত তাল। দরবার থেকেই যে সংগীতের পথ চলা শুরু, সেই গান মঠ-মন্দিরে আশ্রয় পায় বিদেশী আক্রমণের ঘাত-প্রতিঘাতে। আবার সেই গান পথে নেমে এসে আপামর বাঙালির সঙ্গী হয়ে ওঠে চৈতন্যদেবের গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারের সময়। নানান ধারায় বাংলা কীর্তন বিকশিত হয়ে বঙ্গ সমাজের অঙ্গ হয়ে ওঠে। তবু আজকে ফিরে তাকালে, কীর্তনের সেই প্রাচীন আভিজাত্য আর চোখে পড়ে না। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া সেই ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে ক্রমেই কীর্তনের সাংগীতিক উৎকর্ষতা লঘু হয়ে পড়েছে। কীর্তনের বিভিন্ন অঙ্গ ও বিষয়বস্তু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বহু বাঙালি সুরকার ও সাহিত্যিকের সৃষ্টির অংশ হয়েছে ঠিকই। তবু অনেক ক্ষেত্রেই কীর্তনকে লোকগান, ধর্মীয় বা লোকাচারের বিষয় মনে করা হয়েছে, এমনকী ব্যাঙ্গও করা হয়েছে। এই ভ্রান্তি দূর করে কীর্তনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও নান্দনিক দিকটি আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই ‘দরবারী পদাবলী ‘র উদ্দেশ্য। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী পণ্ডিত শ্যামকক সুন্দর গোস্বামীর সারা জীবনের গবেষণা এবং তাঁর শিষ্যা শ্রীমতী দেবলীনা ঘোষের অনুসন্ধানের নির্যাস প্রকাশ পাবে এই অনুষ্ঠানে। গুরু-শিষ্য পরম্পরার এক অনন্য নিবেদন রচনা হবে বাংলার দর্শকের দরবারে।
দেবুস দরবার ও হিন্দুস্থান রেকর্ডের উদ্যোগে এই ‘দরবারী পদাবলি, ‘রুপ অপরূপ বিষয়ে এক অভিনব অনুষ্ঠান হতে চলেছে কলকাতার বিড়লা আকাদেমী সভাঘরে আগামী ১৯ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। সহযোগীতায় ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টার।