ওঁকার মিত্র ঃ এক পড়ন্ত বিকালে দুয়ারে সরকার শিবিরের ভাঙা হাটে তখন গোছগাছ চলছে। জমা পড়া ফর্ম গুণে গেঁথে ব্যাগে ভরার তোড় জোড় চলছে কর্মীদের ক্লান্ত হাতে। আধিকারিকরা ব্যস্ত তথ্য অনুযায়ী সারাদিনের সাফল্য খুঁজতে। এরই মধ্যে জড়ো হওয়া বেশ কিছু যুবক যুবতী পাওয়া গেল একসঙ্গে যারা এসেছিলেন চাকরি-বাকরির কোনও ফর্ম বিলি হচ্ছে কিনা জানতে। স্বভাবতই তারা হতাশ এমন কোনও কাউন্টার দুয়ারে সরকার শিবিরের অন্তর্ভুক্ত নয় জেনে। তাদের দাবি শুধু অনুদান বা ঋণ নয় সরকার তাদের দুয়ারে পেঁছে দিক কাজের খবর। এমন একটা শিবির হোক যেখানে সরকারি-বেসরকারি চাকরির আবেদনপত্র বিলি হবে যোগ্যতা অনুযায়ী। যেখানে থাকবে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করার সুবিধা ও পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ। তাদের আক্ষেপ এভাবে বাংলার যুব সমাজ দাঁড়াবে না কারণ সরকারি সাময়িক আর্থিক সাহায্য নির্ভরতার অভ্যাস গড়ে তোলে, স্বনির্ভরতা বাড়ায় না।
যুব সম্প্রদায়ের এই হতাশার উপর যদি তথ্যের আলো ফেলা যায় তাহলে দেখা যাবে এই দাবি অমূলক নয়। গত কয়েক মাস আগের তথ্য বলছে গ্রামাঞ্চলের ১২ ও শহরাঞ্চলের ১০ শতাংশ শিক্ষিত (যারা অন্ততঃ উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডী পার করেছে) যুব সমাজ কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার ২০১১-১২ সালের ১০ শতাংশ ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ১৩ শতাংশ। এরপর এসেছে করোনা মহামারি। গত দুই আর্থিক বছরে কাজ যাওয়া বহু বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে। গুটিয়ে গিয়েছে বহু ছোট খাট ব্যবসা, কল-কারখানা, অসংগঠিত ক্ষেত্র। দিন মজুরীর স্বল্প শিক্ষিত বেকারের একটা বড় সংখ্যা বাড়তি যুক্ত হয়েছে কর্মহীনতার তালিকায়। সরকার বিনামূল্যে খাদ্য শস্য, ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি, আর্থিক সাহায্য, সুলভে ঋণ দিয়ে সামাল দেবার চেষ্টা করলেও শ্রমের হাহাকার কমানো যায়নি।
মানুষ বাঁচার আশায় সরকারি সাহায্যের লাইনে দাঁড়িয়েছে বটে কিন্তু তার আসল চাহিদা কাজ যেখানে সে তার শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে মানসিক শান্তি লাভ করবে।
বাম বিশারদদের কর্মকুশলতায় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে কর্মসংস্থানের কিরণ কবেই ঢেকে গিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘে। শেষ দিকে ব্রান্ড বুদ্ধবাবু তেড়ে ফুঁড়ে নামলেও সাগরেদদের অকর্মণ্যতায় আকাশ মেঘমুক্ত করা যায়নি। এরপর আরও ১১টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সময় বলে দিচ্ছে গত ৫০ বছরে এই বঙ্গে এমন কোনও রাজনীতিক আসেননি যাঁর কাছে কর্মসংস্তান ছিল প্রথম অগ্রাধিকার। কখনও কেউ ভেবেছেন বৃহত্ শিল্পই এনে দিতে পারে কর্মসংস্থানের জোয়ার আবার কেউ ভেবেছেন কৃষির প্রসারই সরাতে পারে কালো মেঘের পর্দা। ফলে এই দুই লবির টানাপোড়েনে না হয়েছে শিল্পের পত্তন না হয়েছে কৃষির আধুনীকিকরণ। বরং পুরনো শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝাঁপ বন্ধ করেছে, কৃষকের পরিবার উত্সাহ হারিয়েছে কৃষিকাজে। বাংলার মানুষ আটকে গিয়েছে কোনও রকমে কিছু একটা জুটিয়ে দুমুঠো ভাত যোগাড়ের লড়াইতে।
যারা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র তারা খুব ভালোভাবে জানেন মানুষের কর্মসংস্থান ছেলে খেলার বিষয় নয়। যোগ্যতা অনুযায়ী দেশের মানুষকে কাজ পাইয়ে দেওয়া একটি নির্বাচিত সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। শুধু কতগুলো বৃহত্ শিল্প যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে না তেমনি অপরিকল্পিত কৃষিক্ষেত্র কর্ম যোগানোর উপযোগী নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিবিড় পরিকল্পনা। সরকারের থাকতে হয় দেশের মানুষের স্কিল বা কর্মকুশলতার তথ্য। সেই অনুযায়ী সে ঝালমুড়ি বেচবে না কম্পিউটারে বসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাবে তা ঠিক করতে হয়। এমন পরিকল্পনা রচনা করার মতো সংবেদনশীল রাজনীতিক বঙ্গ রাজনীতির সারথী পদে আসীন না হবে ততদিন বঙ্গের যুব সমাজের হতাশা কাটবে না।
ওঁকার মিত্র ঃ এক পড়ন্ত বিকালে দুয়ারে সরকার শিবিরের ভাঙা হাটে তখন গোছগাছ চলছে। জমা পড়া ফর্ম গুণে গেঁথে ব্যাগে ভরার তোড় জোড় চলছে কর্মীদের ক্লান্ত হাতে। আধিকারিকরা ব্যস্ত তথ্য অনুযায়ী সারাদিনের সাফল্য খুঁজতে। এরই মধ্যে জড়ো হওয়া বেশ কিছু যুবক যুবতী পাওয়া গেল একসঙ্গে যারা এসেছিলেন চাকরি-বাকরির কোনও ফর্ম বিলি হচ্ছে কিনা জানতে। স্বভাবতই তারা হতাশ এমন কোনও কাউন্টার দুয়ারে সরকার শিবিরের অন্তর্ভুক্ত নয় জেনে। তাদের দাবি শুধু অনুদান বা ঋণ নয় সরকার তাদের দুয়ারে পেঁছে দিক কাজের খবর। এমন একটা শিবির হোক যেখানে সরকারি-বেসরকারি চাকরির আবেদনপত্র বিলি হবে যোগ্যতা অনুযায়ী। যেখানে থাকবে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করার সুবিধা ও পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ। তাদের আক্ষেপ এভাবে বাংলার যুব সমাজ দাঁড়াবে না কারণ সরকারি সাময়িক আর্থিক সাহায্য নির্ভরতার অভ্যাস গড়ে তোলে, স্বনির্ভরতা বাড়ায় না।
যুব সম্প্রদায়ের এই হতাশার উপর যদি তথ্যের আলো ফেলা যায় তাহলে দেখা যাবে এই দাবি অমূলক নয়। গত কয়েক মাস আগের তথ্য বলছে গ্রামাঞ্চলের ১২ ও শহরাঞ্চলের ১০ শতাংশ শিক্ষিত (যারা অন্ততঃ উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডী পার করেছে) যুব সমাজ কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার ২০১১-১২ সালের ১০ শতাংশ ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ১৩ শতাংশ। এরপর এসেছে করোনা মহামারি। গত দুই আর্থিক বছরে কাজ যাওয়া বহু বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে। গুটিয়ে গিয়েছে বহু ছোট খাট ব্যবসা, কল-কারখানা, অসংগঠিত ক্ষেত্র। দিন মজুরীর স্বল্প শিক্ষিত বেকারের একটা বড় সংখ্যা বাড়তি যুক্ত হয়েছে কর্মহীনতার তালিকায়। সরকার বিনামূল্যে খাদ্য শস্য, ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি, আর্থিক সাহায্য, সুলভে ঋণ দিয়ে সামাল দেবার চেষ্টা করলেও শ্রমের হাহাকার কমানো যায়নি।
মানুষ বাঁচার আশায় সরকারি সাহায্যের লাইনে দাঁড়িয়েছে বটে কিন্তু তার আসল চাহিদা কাজ যেখানে সে তার শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে মানসিক শান্তি লাভ করবে।
বাম বিশারদদের কর্মকুশলতায় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে কর্মসংস্থানের কিরণ কবেই ঢেকে গিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘে। শেষ দিকে ব্রান্ড বুদ্ধবাবু তেড়ে ফুঁড়ে নামলেও সাগরেদদের অকর্মণ্যতায় আকাশ মেঘমুক্ত করা যায়নি। এরপর আরও ১১টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সময় বলে দিচ্ছে গত ৫০ বছরে এই বঙ্গে এমন কোনও রাজনীতিক আসেননি যাঁর কাছে কর্মসংস্তান ছিল প্রথম অগ্রাধিকার। কখনও কেউ ভেবেছেন বৃহত্ শিল্পই এনে দিতে পারে কর্মসংস্থানের জোয়ার আবার কেউ ভেবেছেন কৃষির প্রসারই সরাতে পারে কালো মেঘের পর্দা। ফলে এই দুই লবির টানাপোড়েনে না হয়েছে শিল্পের পত্তন না হয়েছে কৃষির আধুনীকিকরণ। বরং পুরনো শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝাঁপ বন্ধ করেছে, কৃষকের পরিবার উত্সাহ হারিয়েছে কৃষিকাজে। বাংলার মানুষ আটকে গিয়েছে কোনও রকমে কিছু একটা জুটিয়ে দুমুঠো ভাত যোগাড়ের লড়াইতে।
যারা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র তারা খুব ভালোভাবে জানেন মানুষের কর্মসংস্থান ছেলে খেলার বিষয় নয়। যোগ্যতা অনুযায়ী দেশের মানুষকে কাজ পাইয়ে দেওয়া একটি নির্বাচিত সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। শুধু কতগুলো বৃহত্ শিল্প যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে না তেমনি অপরিকল্পিত কৃষিক্ষেত্র কর্ম যোগানোর উপযোগী নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিবিড় পরিকল্পনা। সরকারের থাকতে হয় দেশের মানুষের স্কিল বা কর্মকুশলতার তথ্য। সেই অনুযায়ী সে ঝালমুড়ি বেচবে না কম্পিউটারে বসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাবে তা ঠিক করতে হয়। এমন পরিকল্পনা রচনা করার মতো সংবেদনশীল রাজনীতিক বঙ্গ রাজনীতির সারথী পদে আসীন না হবে ততদিন বঙ্গের যুব সমাজের হতাশা কাটবে না।