সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং : ইংরেজ আমলের ঐতিহ্যবাহী শহর ক্যানিং।বর্তমানে মাতলা ১ ও ২ এবং দিঘীরপাড় পঞ্চায়েতের অধিনস্ত ঐতিহ্যবাহী তথা সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিং শহর। প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ মানুষজন এই শহরের বুক দিয়ে বাস,অটো,টোটো,ম্যাজিক গাড়ি কিংবা ট্রেনে করে কলকাতায় যাতায়াত করেন।এমনকি দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকরা ক্যানিং হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে যান।এহেন ক্যানিং শহরের নাম পৃথিবী খ্যাত। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নোংরা আবর্জনায় ভরপুর,ফুটপাথ জবরদখল করে অবৈধ দোকানপাট গজিয়ে ওঠা।যত্রতত্র বাস,অটো,টোটোর দৌরাত্ম্যে যানজট সৃষ্টি হয়।যাতায়াতের জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারন মানুষদের কে।এছাড়াও ট্রেন ধরার জন্য সাধারন যাত্রীরা যানজটে পড়ে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। চরম বিপাকে পড়েন মুমূর্ষ রোগী নিয়ে যাতায়াতকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও।এমনকি কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে দমকলকেও যানজটে আটকে যেতে হয়।ক্যানিং শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট একটা নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে। এই নির্দিষ্ট রুটিনের ফলে পাঁচ মিনিটের রাস্তা যাতায়াত করতে সময় লাগে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট পর্যন্ত। ঐতিহ্যবাহী ক্যানিং শহরের পরিকাঠামো ভাবে এমন অব্যবস্থার জন্য সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার করে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।ঐতিহ্যবাহী ক্যানিং শহর যাতে তার ঐতিহ্য ফিরে পায়।
এমন ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।শনিবার প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট করে সতর্কবার্তা মাইকিং করে সমগ্র ক্যানিং শহরে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়।এমনকি ডেডলাইনও বেঁধে দেওয়া হয়।আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যে ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা দোকান সরিয়ে নিতে হবে।জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে ফুটপাথ। কোনপ্রকার দখলদারী,গাজোয়ারী এমনকি দাদা,দাদা দিদির সুপারিশও গ্রাহ্য করা হবে না। এছাড়াও অটো,টোটো,ম্যাজিক এবং বাস চালকদের কেও সতর্ক করা হয়। যত্রতত্র গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো যাবে না।দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। যাতে করে যানজট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কোন ভাবেই ক্যানিং শহরের ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি প্রশাসনের তরফে সমস্ত যানবাহন যাতে ক্যানিং নতুন বাসষ্ট্যান্ড থেকে যাতায়াত করে তারজন্য ১৫ জুলাই থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।এদিন সকালে ক্যানিং মাতলাব্রীজ রোডের রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু করে সমগ্র ক্যানিং শহর পরিক্রমা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্কবার্তা এবং নির্দিষ্ট ভাবে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়।নির্দিষ্ট ডেডলাইন অতিক্রম করার পর ক্যানিং শহর স্বাভাবিক ছন্দে না ফিরলে প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়।
ঐতিহ্যবাহী ক্যানিং শহরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস জানিয়েছে, ‘ক্যানিং শহরে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি,ফুটপাথ জুড়ে অবৈধ দোকান গজিয়ে চলাচলের অসুবিধা,বেআইনি ভাবে রাস্তা দখল করে ইট,বালি,পাথর রাখা সহ নানান ধরনের সমস্যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষজন ক্যানিং শহর সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করছেন।তাঁরা বলছেন ক্যানিংয়ে মানুষ হাঁটতে পারে না, সুরক্ষা নেই সহ আজেবাজে কথা বলছেন। তাই সর্বসম্মতভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয়,তাহলে প্রশাসনিক ভাবে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিন সমগ্র ক্যানিং শহরে মাইকিং করে সর্তকবার্তা প্রচারে উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং ১ বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস,ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষ,ক্যানিং ট্রাফিক ওসি স্বপন দাস,ক্যানিং আরপিএফ ওসি পঙ্কজ কুমার,ক্যানিং জিআরপি ওসি তাপস কান্তি দে, জেলাপরিষদ সদস্য সুশীল সরদার,ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রদ্যুৎ রায়,দিঘীরপাড় পঞ্চায়েত প্রধান শিলাদিত্য রায়,উপ প্রধান বিশ্ব দাস,মাতলা ১ পঞ্চায়েত প্রধান হরেন ঘোড়ুই,উপ প্রধান প্রদীপ দাস সহ অন্যান্যরা।