Home Uncategorized কৃষকবন্ধু শস্য বিমার জন্য লম্বা লাইন অথচ চাষে আগ্রহ নেই

কৃষকবন্ধু শস্য বিমার জন্য লম্বা লাইন অথচ চাষে আগ্রহ নেই

0

কুনাল মালিক

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ২৯টি ব্লকেই বর্ষাকালীন আমন ধান চাষে কৃষকদের মন নেই। শুধু ধান চাষ বলি কেন অন্যান্য সবজি, পান চাষেও চাষিরা ক্রমশ উত্সাহ হারিয়ে ফেলছে। বর্ষাকালে যে চিত্র জেলায় দেখা যেত তা এখন উধাও। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে গ্রামীণ মানুষরা বীজ ফেলা, বীজতলা রোপণ করে জমিতে জমিতে গভীর রাত পর‌্যন্ত ট্রাকটর চালাতো। সে সব আর সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ জমি এখন হোগলা আর জঙ্গলে ভরে আছে। দু এক জায়গায় বীজতলা চোখে পড়লেও তা খুবই নগন্য। ভরা বর্ষার মরশুমে জমিতে এখন গরু চরছে। কর্মঠ কৃষকদের আর দেখা মিলছে না। অথচ সরকারি ভাবে নানা পরিষেবা পেতে কৃষকরা এখন মরিয়া। ভিড় জমাচ্ছেন কৃষি দফতরে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে বাত্সরিক ১০ হাজার টাকা এবং শস্য বিমার জন্য কৃষকরা উদগ্রীব হয়ে আছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক সম্মান নিধির জন্য তাদের কৌতুহলের শেষ নেই। বিনামূল্যে বীজধান, মুগ ডাল ও অন্যান্য সামগ্রী পাবার জন্য ব্লকে ব্লকে কৃষকদের ছোটাছুটির শেষ নেই। তাহলে চাষে এতো অনীহা কেন? কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা ড. শান্তনু পাল জানালেন, গত কয়েক বছরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বর্ধমান, বীরভম এবং অন্যান্য জেলায় কিন্তু ভালোই ধান চাষ হচ্ছে। এই জেলায় শ্রমিকের সমস্যা আছে। কৃষিকাজ না করে অধিকাংশ মানুষ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। জেলার কৃষি ও সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সাজাহান মোল্লা বলেন, কৃষক বন্ধুর ১০ হাজার টাকা পেয়ে লোক আগে কয়েক বস্তা চাল কিনে নিচ্ছে। চাষে লেবারের সমস্যা আছে, প্রাকৃতিক দুর‌্যোগের আশঙ্কা আছে তাছাড়া বিনামূল্যে চাল আর ১০০ দিনের কাজ তো আছেই। এর ফলে কৃষকরা আর জমিমুখী হচ্ছে না। কিন্তু এর ফলে তো ধান উত্পাদনের ঘাটতি দেখা দেবে? তার উত্তরে তিনি বলেন, বাইরের জেলা থেকে ধান আসছে তাতেই চলছে চলবে। প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল যে সব কৃষকরা সরকারি প্রকল্প পাচ্ছেন তাদের কৃষি কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হোক না হলে তাদের পরিষেবাগুলো কি বন্ধ করে দেওয়া যায় না? তার উত্তরে সাজাহান মোল্লা বলেন, কে বলবে একথা। কার সাহস আছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক কৃষক নেপাল ভৌমিক জানালেন, দেখুন এখন সবাই কৃষকবন্ধুর শস্য বিমা পেতে চায় চাষ করতে নয়। কারণ চাষ মানেই তো ক্ষতি। সারের যা দাম বেড়েছে সেই অনুযায়ী সবজির দাম বাড়ে নি প্রাকৃতিক দুর‌্যোগের প্রভাব বেড়েছে তাছাড়া রেশনের বিনামূল্যের চাল আছে সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজ আমাদের কুড়ে করে দিয়েছে। তাছাড়া এখন তো মানুষ চাল বিক্রি করে দিচ্ছে। তাহলে খরচা করে জমিতে চাষ করবে কেন? তাছাড়া যারা প্রকৃত জমির মালিক তারা এখন আর কৃষক নয়। জমিগুলো অন্যকে লিজ দিয়ে বাত্সরিক অর্থ পাচ্ছে  মালিকরা। অর্থাত্ অধিকাংশ ভাগ চাষিরাই এখন প্রকৃত কৃষক অথচ তারাই সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন। প্রকৃত জমির মালিকরা এখন কৃষক বন্ধু শস্যবিমার সুবিধা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কিছুতেই আর কৃষিকাজ করবে না।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version