Home Uncategorized কল্লোলিনীর কান্না মোছাবার কেউ নেই!

কল্লোলিনীর কান্না মোছাবার কেউ নেই!

0

এখনও মাস দুয়েক কাটেনি। মেট্রো রেল নির্মাণের ধাক্কায় বৌবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের কান্না এখনও থামেনি। তারই মধ্যে ঝিরিঝিরি বর্ষার ট্রেলারেই ট্রাজিডির কান্না উত্তর থেকে দক্ষিণে। কেউ মারা যাচ্ছে খোলা ইলেকট্রিকের ছোবলে, কেউ মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বাজার করতে গিয়ে। কল্লোলিনী কলকাতা ফুঁপিয়ে কাঁদছে প্রতিদিন।

পুরসভার ই-সার্ভিস, অনলাইন পরিষেবা, টক টু মেয়রে চলছে আধুনিক কলকাতার প্রচার, আর অন্যদিকে রাস্তাঘাটে, বাজারে, বস্তিতে হয় হোঁচটের ঝাঁকুনি, নয়তো সোজা শ্মশান যাত্রা। সত্যজিত্ রায়ের সঙ্গে শব্দ মিলিয়ে বলতে ইচ্ছা করে যত কাণ্ড কলকাতায়। রাস্তা ঘাটে জেলার কাছেও হার মেনেছে কলকাতা। সমগ্র কলকাতার রাস্তা ঘাটে সমান করে চলার উপায় নেই। সর্বত্র জোড়াতাপ্পির দোলদোলানি। ফুটপাথে রঙ বেরঙের টালি উঠে চলা দায়। তার উপর সেগুলির বেশিরভাগটাই নির্মান কাজের গোডাউন নয় দোকানদারের কবলে। ফুটপাথে চলা দায়, রাস্তায় মৃতু্য ভয়। এযেন ডাঙায় বাঘ জলে কুমীর অবস্থা।

কলকাতার অফিসপাড়া আর ময়দান এলাকা বাদ দিয়ে সর্বত্র জঞ্জাল এখন কলকাতার ভষণ। শহরের গলি, পাড়া, বস্তি বাজার এমন কি অফিস কাছারি স্তূপাকার জঞ্জালের কবলে। বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধের দূষণ। আলিপুরের ডিএম অফিস, পুলিশ কোর্ট চত্বর এই জঞ্জাল চিত্রের প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হতে পারে অবলিলায়। সেখানে নেতা-মন্ত্রী, আইএএস, আপিএসদের নিত্য আনাগোনা সত্ত্বেও পাল্টায় না চিত্র। এটাই যেন কলকাতার ছবি। রইল বাকি বাজার। রাস্তা ঘাটের খোলা বাজার বাদ দিয়ে পুরসভার নিজস্ব বাজারগুলোর চেহারা দেখলে স্রেফ অাঁতকে উঠতে হবে। কলকাতাবাসী অসম সাহসী তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকাল সন্ধ্যা চলছে বিকিকিনি। উপরে চিড় ধরা ছাদ, নিচে জলময় স্যাঁতসেতে ভমিতল। ইলেকট্রিকের ঝুলে পড়া লাইন ছোবল মারার অপেক্ষায়। সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে জিনিসটুকু নিয়ে বেরোলে বাঁচি। আর আগুন লাগলে ছবি হওয়া ছাড়া গতি নেই। অগ্নি নির্বাপনের হাস্যকর ব্যবস্থায় অভ্যস্ত সবাই।

শুধু পায়ের তলার মাটি নয় আকাশে তাকালে তারের জঞ্জালের ফাঁক দিয়ে মেঘ গুলো কালো দাগে ফালাফালা। সরাবার জন্য নাকি লোক লাগয়ে সময় বেঁধে দিয়েছিল পুরসভা। এখনও তারমুক্তির সময় আসেনি হয়ত। তাই বেওয়ারিশ ল্যাম্প পোস্টে দখলের লড়াই। টেলিফোন বলে আমায় দেখ তো সিইএসসি বলে আমায় দেখ। কেবল অপরারেটররা বলে কেন! আমরা কম যাই নাকি। তাহলে পোস্টার আর ফ্লেক্সওয়ালাদের দোষ কোথায়? ফলে কলকাতা জুড়ে পোস্টার আর চিত্র প্রদর্শনী। উঁহু, দৃশ্যদূষণ বলে কলকাতার বদনাম কিন্তু সহ্য করা যাবে না। ওসব বিদ্বেষীদের কাজ।

স্থল-অন্তরীক্ষের পাশাপাশি গঙ্গার জল ছিল কলকাতার আর এক লাইফ লাইন। সেই জন্যই হয়তো ক্ষমতায় আসার আগেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী টেমস্-এর স্বপ্ন নিয়ে ভেবেছিলেন কলকাতাকে লন্ডন বানাবার কথা। কিন্তু সে যে কথার কথা তা বুঝিয়ে দিল কলকাতার গঙ্গার ঘাট আর আদি গঙ্গার দুরবস্থা। একসময় যা ছিল কলকাতার আকর্ষণ এখন তা দূষণের ভাণ্ডার। জল পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে সহ্যের সীমা। গঙ্গার পাড় সাজলেও আদিগঙ্গার পাড় থেকে যায় জবরদখলকারীদের দখলে। রাজনীতির অঙ্কের হিসাবে গঙ্গার দূষণ তাই এক বিষম সমস্যা।

কলকাতার গপ্পো অমৃত সমান। এখানে বৃষ্টি হলে জল জমে। জমা জলে জন্ম নেওয়া মশককূল প্রাণ নেয় কলকাতাবাসীর। কিন্তু খোলা বিদু্যত্ নেমেছে জমা জলে তাদের রাজত্ব কায়েম করতে। কলকাতার রাস্তা কাঁপাচ্ছে পুলিশ সার্জেন্টরা। কারোর দিকে এগোলে বুক কাঁপে থরথর। কিন্তু মা-এর উপরে ঘুড়ির সুতোর কাছে এরা অসহায়। পুরসভার নাকি ভাঁড়ে মা ভবানী। মাইনে দিতেই হিমসিম তারা। পেনশনভোগীরা বিক্ষোভে সামিল। এমন নড়বড়ে পুরসভা নিয়েই কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে। তবুও তো সে বিশ্ব বাংলার রাজধানী, কল্লোলিনী। তাকে নিয়ে নিন্দা করে বেড়ানো একান্তই বাতুলতা। কারণ কল্লোলিনীর কান্না মোছাবার লোক নেই এই বৃদ্ধ শহরে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version