তালুকের খোঁজে ছাড়ের দাওয়াই
ওঁকার মিত্র : মেধাসম্পন্ন কর্মকেন্দ্র সংস্কৃতির এখন ২ টাকার চাল, কৃষক অনুদান, আবাস যোজনা, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বাঙালি এখন দুপুর বেলায় ৫ টাকার ডিমভাতের লাইনে দাঁড়াতেও কুন্ঠা বোধ করে না। যে বাঙালি একসময় ফেলে ছড়িয়ে খেত সে এখন কুড়িয়ে বাড়িয়ে খেতে শিখেছে। সময়ের চাবুকে বাংলার বাবুয়ানি ঘুচেছে কবেই। যারা এখনও খাচ্ছে তারা হয় নিতান্তই বোকা নয়তো সাহায্যের লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা পাচ্ছে। অবশ্য শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা এই অনুদান প্রকল্প নিয়ে এমন ঢেকুর তুলছেন তাতে মনে হচ্ছে আবেদনপত্রের সংখ্যাই যেন সাফল্যের মাপকাঠি।
কিন্তু আজও যেসব রাজনীতিক সমাজ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন তারা জানেন যে সাহায্যের কৌশল নয় কর্মকুশলতাই অগ্রগতির প্রধান হাতিয়ার। কর্মযোগ নিয়ে চর্চা করেন তাদের বিশ্বাস একমাত্র কর্মই মানুষ ও তার তৈরি সমাজকে চিরস্থায়ী করে। তাই উপরে সাহায্য বিতরণের গুণগান গাইলেও সরকারের মাথারা ছুটে বেড়াচ্ছেন কর্মসংস্থানের খোঁজে। সম্প্রতি শিল্পতালুকে দেদার ছাড় ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আর ২০ একর নয় মাত্র ৫ একর জমি থাকলেই মিলবে শিল্পগড়ার ছাড়। আগের বাধা থাকবে হিমঘর সহ নানা লজিস্টিক সার্পোটের সুবিধা। খোলা হচ্ছে এক জানালা ব্যবস্থা যেখান থেকে মিলবে সবরকমের অনুমতি। বঙ্গবাসীকে কাজ দিতে এ এক সাধু সিদ্ধান্ত সন্দেহ নেই তবু তা রেখে যায় বেশ কিছু প্রশ্ন।
প্রথমত শিল্পতালুক গড়ার জন্য সরকারের যখন এত আগ্রহ তখন বর্তমান শিল্পতালুকগুলো ধুঁকছে কেন। এগুলের পরিকাঠামো ও খতিয়ে দেখে উন্নয়নের ব্যবস্থা করলে মিলতে পারে চটজলদি কাজের সুযোগ। দ্বিতীয়ত শিল্পতালুক গড়ার প্রধান শর্ত হল পরিবহনবান্ধব রাস্তা। অথচ বেহাল পথঘাট নিয়ে ককেয়দিন আগেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ততীয়ত শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধা হল সরকারের ভমি নীতি। বামফ্রন্ট সরকারের বর্গা অপারেশনের দৌলতে বঙ্গভমি এক টুকরো মালিকানার কবলে, একত্রিত করে শিল্পের জন্য জমি পাওয়া সত্যি দুষ্কর। চতুর্থত রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেখানে মেটাতে হবে একাধিক গোষ্ঠীর আবদার, সিন্ডিকেটের অনৈতিক দাবি।
কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প চাই। শিল্পের জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা। উপরতলায় তারও অভাব নেই। মহামারির এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ফের শিল্প সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবু এ রাজ্যে শিল্প কাটছে না কেন প্রথমেই তা খতিয়ে দেখা দরকার। আগে রোগ চিহ্নিত না হলে ওষুধ দিয়ে লাভ নেই। না হলে সবই বাংলার যুবক যুবতীদের কাছে খুড়োর কলে পরিণত হবে। বাংলা পড়ে থাকবে নিচের সারিতেই।