দেবাশিস রায় :-
কথায় আছে ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। তবে, বাঘের অবস্থা যেমনই হোক না কেন কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে দুই বাংলাও। পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাঘ মাসের মাঝামাঝিতেও মাত্রাছাড়া ঠান্ডায় কাহিল বঙ্গবাসী। সকাল সন্ধ্যায় হাটবাজারে বেচাকেনার বেহাল অবস্থা। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই গ্রামবাংলার রাস্তাঘাট কার্যত জনহীন এবং যানবাহনের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। স্কুল কলেজে যেতে পড়ুয়াদের অনিহা। সেই সঙ্গে ব্যহত হচ্ছে কৃষিকাজ। কনকনে ঠান্ডায় সাতসকালে চাষিরা বোরো ধানের জমি তৈরি করতে যেতে পারছেন না। সকাল সকাল জমিতে গিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি সহ বিবিধ ফসল তুলে এনে বিক্রির জন্য বাজারে পাঠাতেও চাষিদের কালঘাম ছুটে যাচ্ছ। এই মুহূর্তে অতি কষ্টে জমিতে বোরো ধান চারা রোপণ করার কাজ চলছে। তবে, তীব্র ঠান্ডায় রোপণ করা চারা বাঁচানোও একপ্রকার দুঃসাধ্য। হাড়কাঁপানো ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে সন্ধ্যাবেলায় জায়গায় জায়গায় আগুন পোহানোর তোড়জোড় চোখে পড়ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ পূর্ব থেকে পশ্চিম, সর্বত্রই কম-বেশি একই ছবি। এবারে সপ্তাহ দুয়েক আগে দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রাও কার্যত লজ্জা পেয়েছিল রাঢ়বঙ্গের ছাতনা, পানাগড়, পুরুলিয়া, শান্তিনিকেতনের কাছে। চলতি সপ্তাহেও এসব জায়গায় সকাল বিকালে তাপমাত্রা ৭- ৯ ডিগ্রির ঘরে ঘোরাফেরা করে বলে একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছে। ২৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে বিশেষ কাজে বাংলাদেশ সফরে আসার সময় কনকনে ঠান্ডায় কার্যত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। নদিয়া জেলার গেদে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেড়িয়ে সাড়ে দশটা নাগাদ বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করতেই যেন ঠান্ডার তীব্রতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষজনকে ঠান্ডায় কাবু হতে দেখা যায়। কৃষক থেকে শুরু করে পথচারী, বাসযাত্রী সকলেরই জবুথবু অবস্থা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার কৃষ্ণনগর এবং বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করাতেই এমনই ঠান্ডার প্রকোপ বোধ হয়। রবিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার পানাগড়ের বাসিন্দা শিক্ষক পার্থসারথি দাস বলেন, পানাগড় ও শান্তিনিকেতনের ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তিরেখা অতিক্রম করায় সংলগ্ন জায়গাগুলোতে যেমন প্রখর গরম পড়ে তেমনি কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা হয়। এখন এখানে তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি নেমে গিয়েছে। এদিকে একটানা হাড়কাঁপানো ঠান্ডার পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই সকাল-সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশার দাপট অব্যাহত। পূর্ব বর্ধমান জেলার সীমান্তবর্তী জঙ্গলমহল আউশগ্রামের হেদগোড়িয়া(হেদগড়া) গ্রামের বাসিন্দা কৃষক পরিবারের সন্তান সুব্রত মণ্ডল রবিবার জানিয়েছেন, আজও কনকনে ঠান্ডা পড়েছে। প্রতিদিন ৭-৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চলাফেরা করা রীতিমতো কষ্টকর। ফলে বিকেল হতেই লোকজনের অভাবে রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। গ্রামের মানুষজন ঠান্ডার কবল থেকে রেহাই পেতে সন্ধ্যাবেলায় আগুন পোহাচ্ছে। এরই পাশাপাশি কিছুদিন আগে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বৃষ্টিপাতের দৌরাত্ম্য শুরু হওয়ায় অসংখ্য মানুষ বর্তমানে অসুস্থতার শিকার। ঘরে ঘরে সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কাহিল শিশু থেকে বয়স্ক অনেকেই।ছবি: আউশগ্রামের হেদগোড়িয়ায় আগুন পোহাতে ব্যস্ত বাসিন্দারা। শনিবার দুপুরে ঠান্ডায় শুনশান বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা শহর।