কুনাল মালিক: যশ থেকে রক্ষা পেল দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। যশ যখন ওড়িশার ধামড়ায় আছড়ে পড়ে, তখন এই জেলার পূর্ণিমা ভরা কোটালে বিভিন্ন নদী ফুঁসছিল। নদীর এই রুদ্র রূপ কবে দেখেছে নদীপারের মানুষজন তা ভেবে পাচ্ছিল না। ২৬ মে সকাল ১০টার পর থেকেই বিভিন্ন নদী বাঁধ একের পর এক ভাঙতে থাকে। অসহায় মানুষ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে জল আটকাবার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু গর্জে ওঠা নদীর জলকে আটকে রাখা যায়নি। সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলী সহ বিভিন্ন ব্লকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে মাটির বাড়ি। চাষের জমি, মাছের পুকুর ভেসে গেছে। সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপে চোখে পড়েছে ঘরের চালায় মানুষদের অসহায় ভাবে বসে থাকতে। অনেকে জল থেকে বাঁচতে গাছে উঠে পড়েছে। সুন্দরবন এলাকা ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, বজবজ-১ ও ২, মহেশতলা এলাকাতেও হুগলি নদীর জল নদী বাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। ফলতা থানা কার্যত নদীর জলে থইথই করতে থাকে। নদী লাগোয়া এলাকা থেকে অনেক মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৭ মে অর্থাত্ যশের আগমণের দ্বিতীয় দিনেও বিভিন্ন নদীতে ভরা কোটালের জোয়ারের তীব্রতা ছিল।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ শিবির চলছে। এখনও বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে। ত্রাণ নিয়ে কিছু কিছু সমস্যাও আছে। সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জী পূজালী ও ডায়মন্ড হারবারে ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যশের ল্যান্ড ফলের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমাদের রাজ্যে যশের প্রভাবে এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ১৩৪টির বেশি নদী বাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, আমফানের থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসক যশকে রুখতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এনডিয়ারএফ, এসডিআরএফ এবং সিভিল ডিফেন্সের স্বেচ্ছাসেবকরা খুব ভালো কাজ করেছেন। তবে সুন্দরবন এলাকায় এখনও যে নদীবাঁধ একটা বড় সমস্যা তা নতুন করে আবারও প্রমাণিত হল। আয়লা এসেছিল ২০০৯ সালে। এরপর এক যুগ কেটে গেলেও, নদী বাঁধের যে বেহাল অবস্থা ফুটে উঠল, তা নতুন করে রাজ্য সরকারকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।