Wednesday, July 3, 2024
spot_img

অশোকনগরে তেল উত্তোলন বিশ বাঁও জলে?

কল্যাণ রায়চৌধুরী: মাটির নীচে খনিজ তেলের হদিশ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া নিয়েও নেই কোনও সমস্যা। এ সত্ত্বেও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরে তেল উত্তোলন নিয়ে সমস্ত কার্যকরী পদক্ষেপ থমকে গিয়েছে। প্রায় বছর দুয়েক আগে অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাইগাছিতে ওএনজিসি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে মাটির নিচে খনিজ তেল ও গ্যাসের ভান্ডারের হদিশ পায়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট পুরসভার কাছ থেকে তারা চার একর জমি কিনে প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে তা ঘিরেও ফেলে। এরপর বছর দুয়েক আগে তারা কিছু তেল তোলার পর মজুত তেল ও গ্যাসের ভান্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আরও প্রায় ১২ একর জমির জন্য অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার কাছে আবেদনও জানায় ওএনজিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে এই তেলের হদিশ তারা পেয়েছে এবং যে পরিমাণ জমি তারা আরও দাবি করেছে, তা সবটাই উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দফতরের খাস জমি। এমনকি পুরসভার পক্ষ থেকে ওএনজিসিকে নো অবজেকশন শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা সূত্র জানায়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও আসেন এখানে। তিনিও সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন। এবং শীঘ্রই তেল ও গ্যাস উত্তোলনের আশ্বাসও দেন বলে, স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন। এ সত্ত্বেও দীর্ঘ কয়েকমাস কেটে যাবার পরও নতুন করে কোনও কাজ আর না এগোনোয় স্থানীয় জনমানসে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় হেমাঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্ণধার তথা সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে জনৈক বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তেলের খনির কোনও কাজ হচ্ছে না। আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে আছি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উদ্বোধন করে চলে গেছেন, ওই পর্যন্তই। বহু কর্মসংস্থানের কথা শোনা গেছে, কিন্তু কিছু বাস্তবায়নের লক্ষণ এখনও নেই। কোনও তেলের গাড়িও যেতে দেখছি না। ভিতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, বা আদৌ কোনও কাজ হচ্ছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে কোনও শ্রমিক এখন নেই, এমনটাই জেনেছি।
তণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, এটা তো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রোজেক্ট। ওরা কীভাবে কী করছে না করছে বলতে পারব না। তবে এখানে যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এসেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, এটা তো একটা সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প। ফলে হঠাত্ করে বা রাতারাতি তো কিছু করার ব্যাপার নয়। ওএনজিসি তো বলেছিল, এখানে তেল এবং গ্যাস দুটোই পাওয়া যাচ্ছে। যা এক কথায় বিরল ঘটনা। তবে এখন যে কাজ কেন বন্ধ আছে, তা আমার জানা নেই।
হাবড়ার জনৈক বিজেপি নেতত্ব তথা বিশিষ্ট আইনজীবী রামকৃষ্ণ দে বলেন, এটা তো ওএনজিসির টেকনিক্যাল ব্যাপার। তবে এর ভিতরে রাজনৈতিক কোনও কারণ আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমি পেশায় আইনজীবী হলেও, যেহেতু বিজ্ঞানের ছাত্র তাই এটুকু বলতে পারি, ওএনজিসি সার্ভে করে, তেল তুলে যদি দেখে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে, তাহলে তারা কাজটা থেকে সরে আসবে। এটাই পদ্ধতি। তবে অশোকনগরে এখন তেল উত্তোলনের কাজটা কেন বন্ধ আছে, এটা সঠিকভাবে আমার জানা নেই।
এব্যাপারে অশোকনগর কল্যাণগড়ের পুর প্রশাসক প্রবোধ সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ওএনজিসি এখন নতুন করে উত্পাদন বাড়াচ্ছে না। মেশিন চালু রাখছে। ওদের নামে প্রয়োজনীয় যে সরকারি কাগজ আসার কথা, তা এখনও আসেনি। এছাড়া শুনেছি স্থানীয় দুটো ক্লাবের সাথে ওদের একটু ঝামেলা হয়েছিল জায়গা নিয়ে। তবে এটা মিটে যাবে। তবে ওএনজিসি কী করবে না করবে এ ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে কোনও কথা হয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এসে যাবে ধরে নিয়ে নির্বাচনের আগে ব্যাপকভাবে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্র। এখন সেই উদ্যোগে যথেষ্ট ভাঁটা পড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় তেল উত্তোলনের বিষয়টা বিশ বাঁও জলে চলে গেল কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবোধ বাবু বলেন, ব্যাপারটাতো এখন দেখছি প্রায় সেই রকমই।
অশোকনগরে তেল উত্তোলন স্থলে পেঁছে দেখা পাওয়া গেল না ওএনজিসির কোনও আধিকারিকের। ফলে তেল উত্তোলনের অচলাবস্থা নিয়ে পাওয়া গেল না কোনও প্রতিক্রিয়া। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে চঞ্চলতা দেখা দিয়েছিল এই প্রকল্পে তাও এখন উধাও।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

1,231FansLike
10FollowersFollow
4SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles