শিলং থেকে ড. জয়ন্ত চৌধুরী : মেঘালয় রাজ্যের বর্তমান রাজধানী শিলং শৈল শহর একসময় অসম রাজ্যের রাজধানী ছিল। সে সময় বঙ্গ দেশের বহু মানুষের আত্মীক যোগ গড়ে ওঠে এই শহরের সঙ্গে। অসমও একসময় বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আধুনিক শিলং শহরের গড়ে ওঠার পিছনে বাঙালিদের অবদান কম নয়। বাঙালির পর্যটন ভাবনায় বর্তমান শৈল শহর শিলংয়ের আকর্ষণ ক্রমবর্ধমান। অথচ বাঙালিরা আজ অনেকটাই কোনঠাসা। শিলং বঙ্গ প্রদেশ এবং পরবর্তীকালে অসম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর স্থানীয় খাসি জয়ন্তীয়া পাহাড়ের উপজাতিরা শিক্ষা চাকরি বহু ক্ষেত্রেই অনুন্নত সম্প্রদায়ের তকমা থাকায় নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। মেঘালয়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বাঙালি বলে জানালেন প্রাক্তন অধ্যক্ষা উমা পুরকায়স্থ। তিনি থাকেন অক্সফোর্ড হিল এলাকায়। রবীন্দ্রচর্চায় ও নেতাজি চর্চায় পরিচিত নাম। তিনি জানান, সন্ধ্যাবেলায় তারা শঙ্খধ্বনি দিতে পারেন না কারণ বাড়িওয়ালারা অসন্তুষ্ট হন। উল্লেখ্য খ্রীস্টান অধু্যষিত মেঘালয়ে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যালঘু। বৌদ্ধ মঠ থাকলেও হিন্দু দেবদেবীর মন্দির হাতে গোনা, একসময়ের সম্প্রীতির শহর শিলংএ বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ক্ষোভ প্রকাশ করে উমাদেবী জানান রাজ্য সরকারি প্রশাসনে বাঙালিরা ব্রাত্য। বিবাহসূত্রে প্রায় তিরিশ বছর শিলংএ বসবাস করছেন বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা মালবিকা চক্রবর্তী। তিনিও রবীন্দ্র বিবেকানন্দ ও নেতাজি স্পর্শধন্য বাড়িগুলির যাতে যথাযথ সংরক্ষণ হয় সে ব্যাপারে সক্রিয় এবং বইপত্র লিখেছেন। কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে ঐক্যমত্যের অভাব শিলং শহরের ঐতিহ্যময় স্থানগুলিকে পর্যটকদের কাছে ঠিকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মালবিকা দেবী প্রতিবেদককে জানান।
কিছুটা বাঙালি অধু্যষিত জেল রোডের ব্যবসায়ী রাজীব দে প্রতিবেদককে জানান, যে সম্প্রতি তাঁরা নেতাজি মূর্তি স্থাপন করেছেন সরকারি সাহায্যে। স্থানীয় কালীমন্দিরে শিলং-এর বহু বাসিন্দা তাঁদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মহাপ্রয়ানের এক বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ শিলং-এ এসেছিলেন। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কালচারাল মিশন যথাযথভাবে যে স্মৃতি বহন করছেন নানা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে। রবি ঠাকুরের রক্তকরবী কিংবা শেষের কবিতার পটভমি লাবাংএর ব্রুকবাইডের সেই বাড়ি কিংবা জিত্ভমি বাড়িটি রবীন্দ্র অনুরাগীদের চেষ্টায় সংরক্ষিত হলেও নেতাজির অবস্থান গৃহগুলির কোথাও কোনও ফলক নেই। বিশেষ করে আড়াই বছর বার্মার বিভিন্ন জেলে সুভাষচন্দ্র বন্দী থাকার পর ভগ্ন স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মতো পরিবারের কিছু সদস্যের সঙ্গে যে ক্যালসন লজে ছিলেন সেটি বর্তমান বিএসএনএল অফিসার কেএম মাধবনপুরী তাঁর বসবাসের ঘর করেছেন। সরকারি সেই বাংলোতে কোন স্থানীয় কিংবা বাঙালি নেতাজি অনুরাগীরা প্রবেশ করুক কিংবা ছবি তুলুক তা তিনি কিছুতেই চান না, বাঙালিদের ব্যবসাপত্র, পৈতকগৃহগুলি ক্রমশই হাতবদল হয়ে চলেছে। লোকসভাতে বাঙালী ঐক্যের পাশাপাশি শিলংএও বাঙালিদের পুরনো ঐক্য আসা জরুরি।