আশরাফুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা: একাত্তরে বাংলাদেশ তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের
দ্বারপ্রান্তে। হানাদার পাকিস্তানী জান্তারা এতোক্ষণে বুঝে গেছে পরাজয়
আসন্ন। তাই আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে বেছে বেছে জাতির
শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্বিচারে হত্যায় মেতেছিল হানাদার বাহিনী। ১৬
ডিসেম্বর ১৯৭১ এ যখন চারদিকে বিজয়োল্লাস চলছে বেদনার ক্ষতকে সঙ্গী করে
ঠিক সেই সময়ে খবর আসতে থাকে হানদারদের হাতে নির্মমভাবে বাংলাদেশের শীর্ষ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বধ্যভূমি শনাক্তের। বিজয়ে আনন্দ ক্রমেই আরও বিষাদে
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেরিয়েছে ৫১ বছর। নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে এই
দেশে। কিন্তু মাতৃভূমির মুক্তির জন্য আত্মত্যাগের সেই মহিমা ম্লান হয়নি।
প্রতি বছরের মতো ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে গোটা দেশবাসী। বুধবার ঐতিহাসিক
বেদনাসিক্ত এই দিনে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে
শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকাল ৭টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ
করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তারা কিছু সময়
নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা
বলেন ও তাদের খোঁজখবর নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য,
তিন বাহিনীর প্রধান, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ
নেতা এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দলীয় নেতাদের
সঙ্গে নিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের
সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা
জানান। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের
দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আজ (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের এ দিনটি এক বেদনার দিন। এ
দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর,
আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের
হত্যা করে। এ ঘটনায় স্তম্ভিত, হতবাক হয় সারা বিশ্ববিবেক। বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা
হয়।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ভোর থেকে রাজনৈতিক দলের
পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বিশিষ্টজনরা গভীর শ্রদ্ধায় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
করছে। এর আগে মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক
বাণী দিয়েছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন,
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির
মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও
রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শহীদদের স্মরণে
বিভিন্ন সংগঠনের আলোচনাসভা ইত্যাদি।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে কর্মসূচি
নেয়া হয়েছে। দলটির দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ক্ষণে
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে
কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টায়
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু
ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮টায়
রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে দলটি। এ ছাড়া বিকেল ৩টায়
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে দেশের বরেণ্য
বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।