ডাঃ মানস কুমার সিনহা 


গত শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত যক্ষা বা টিবি রাজ রোগ হিসেবে বর্ণিত হতো।একটি বহুল প্রচলিত কথাই ছিল যে “যার হয় যক্ষা তার নাই রক্ষা” । ২০২২ সালে যক্ষা আক্রান্তের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিপোর্ট অনুযায়ী ওই এক বছরে বিশ্বে মোট ৭৫ লক্ষ মানুষ যক্ষা আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ২৮.২ লক্ষ (২৭%)  রোগী ভারতের। যক্ষা আজও অন্যতম একটি সংক্রামক মারণ ব্যাধি।যদিও সংখ্যার নিরিখে ডায়াগনোস্ড রোগীর সংখ্যা ভয়ানক মনে হলেও বিভিন্ন প্রকার ওষুধের সঠিক প্রয়োগে চিকিৎসার সাহায্যে এই রোগকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে ডটস (DOTS) বা ডাইরেক্টলি অবজারভ্ড থেরাপি শর্ট কোর্স, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতিতে ডটস সেন্টারে রোগীর ওষুধ গ্রহণের ফলে যক্ষা চিকিৎসায় এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। যক্ষা রোগের সংক্রমণ মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে হয়ে থাকে। প্রধানত ফুসফুসের রোগ হলেও এটি শরীরে প্রায় সমস্ত অঙ্গেই ছড়াতে পারে। এই রোগ বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, কথা বলা, গান গাওয়া ইত্যাদির সাহায্যে এই রোগ ছড়াতে পারে। সাধারণত রোগীর সাথে যারা অনেক সময় অতিবাহিত করেন অর্থাৎ বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যের মধ্যে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তবে রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না।  যক্ষা জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি বেশি হয় তাহলে যক্ষা জীবাণু নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে এবং যক্ষার কোন উপসর্গ দেখা যায় না। প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এই রোগের প্রকাশ ঘটে এবং  ফুসফুসের যক্ষায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই সর্বাধিক।  আক্রান্ত রোগীর প্রধান উপসর্গগুলি হলোঃ১.তিন সপ্তাহের অধিক কাশি ভালো না হওয়া। ২.থুতু বা কফের সাথে রক্ত বের হওয়া। ৩.সন্ধ্যার দিকে জ্বর এবং রাতে ঘাম দেওয়া।৪.কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস ও ক্লান্তি।৫.ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি।
তবে চিকিৎসা শুরু হবার কিছুদিনের মধ্যেই রোগীর সংক্রমণ করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় ।এছাড়া বিসিজি টিকা শিশুর জন্মের অনতিবিলম্বে দেওয়ার ফলে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা জন্মায়। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে থুতু পরীক্ষা এবং বুকের এক্সরে করা হয়ে থাকে। আগেই বলা হয়েছে যে ডটস পদ্ধতিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুযায়ী যক্ষার চিকিৎসা সম্ভব। সাধারণত ৬ মাসের চিকিৎসায় রোগ নির্মূল হয়। তবে আক্রান্ত অঙ্গের ওপর রোগের চিকিৎসার সময় নির্ভর করে।  আজকাল এমডিআর বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স টিবির উপস্থিতি চিকিৎসকদের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে এবং সেক্ষেত্রে প্রায় দু’বছর অবধি সময় লাগতে পারে রোগ সম্পূর্ণ ভাবে সারতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here