Wednesday, July 3, 2024
spot_img

প্রতিদিন চলছে মানবাধিকার হত্যা সমাজের ভগবান বিদ্বজনেরা চুপ কেন?

বাংলা নাটকের একটি গান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়, নাট্যপ্রেমীদের মুখে মুখে ফিরত। গানটি ছিল- কেউ শব্দ করোনা, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলোযোগ সইতে পারেন না, কেউ শব্দ কোরো না। ভারতীয় বিশেষ করে বঙ্গ সমাজে যারা নিজেদের সমাজ নিয়ন্ত্রক বলে দাবি করেন সেই মানবাধিকার কর্মী ও বিদ্বজনদের জন্য বর্তমান আফগানী গোলোযোগের মাঝে এই গানটি খুবই উপযোগী। অতীতে নানা সময়ে ভারত তথা বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত করেছে নানা আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন। কখনও কিউবা, কখনও ভিয়েতনাম, কখনও চিন বা রাশিয়া ঢেউ তুলেছে পথে প্রান্তরে। কখনও স্লোগান, কখনও মোমবাতি হাতে মৌনতা বিদ্বজনদের হাতিয়ার হয়েছে বারবার। কিন্তু প্রায় দুসপ্তাহ ধরে প্রতিদিন যখন আফগানিস্তানের মাটিতে মানবতার হত্যা হচ্ছে তখন সমাজের এইসব ভগবানরা নিদ্রা গিয়েছেন। কোনও গোলযোগই তাদের কানে ঢুকছে না; শিউরে ওঠা তো দূরের কথা। পঞ্চশিরে যখন অকুতোভয় আফগান নারী পুরুষরা মাসুদের নেতত্বে জীবন বাজি রেখে তালিবান জল্লাদদের বিরুদ্ধে লড়ছেন তাদের মানসিক শক্তি যোগাতে কেউ টুঁ শব্দটি করছেন না। অনেক সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন নিদ্রা নয়, বালিতে মুখ গুঁজে এরা অপেক্ষা করছেন গোলোযোগ থামলেই টিভি চ্যানেলে বসে নিজেদের জ্ঞান জাহির করার জন্য। এরা এখন ভুলে গিয়েছেন ধর্মে-ধর্মে, জাত-পাতে, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, দলে-দলে সব মারামারি-কাটাকাটি আসলে মানবতারই হত্যা। পৃথিবীর যেখানেই সেটা হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা জরুরি।

অবশ্য ভারতের বিদ্বজনরা এ ব্যাপারে অতীব চুজি। তাদের কাছে সবটাই হয়তো মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। তাই তারা কোথায় প্রতিবাদ করবেন আর কোথায় করবেন না সেটা নিজেরাই ঠিক করে নেন। শুধু তাই নয় মানবাধিকার হত্যা নিয়ে বিদ্বজনদের মধ্যে মতভেদও বিস্তর। আবার মনে ইচ্ছা থাকলেও কার ডাকে সাড়া দিয়ে ইচ্ছাপূরণ ও প্রচার দুটোই সম্ভব এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই চলে যায় অনেকটা সময়। শেষপর‌্যন্ত এরা হয়তো একটা সর্বজনগ্রাহ্য ব্যানার নিয়ে বা মোমবাতি ধরে বা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে বেরোবেন যখন তখন হয়তো মানবাধিকার ধ্বংসের খেলা অনেকটাই এগিয়ে যাবে এবং দ্বিগুণ উত্সাহে আরও একটা অভিযান শুরু করে দেবে মানবতার জল্লাদরা।

এদেশের এইসব মানবাধিকার কর্মী ও বিদ্বজনদের দেখে অবশ্য আক্ষেপ করার কিছু নেই। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে  ঘটে চলা ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ এরা করেন না। শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বাধীন লেখক-লেখিকাকে যখন দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার বিধান দেওয়া হয় তখন এরা নিদ্রামগ্ন থাকেন। আসলে যেখানে ফায়দা নেই অথচ হুমকির ভয় আছে সেটা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই করেই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা করে-কম্মে খাচ্ছেন, আমাদের উপর নিজেদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমরাও সমাজে এইসব বুদ্ধিজীবীদের ধারণ করে গর্ব বোধ করে থাকি। এদের আসল চরিত্রটা বুঝতে পারি তখন যখন সত্যিকারের বিপদ এসে সামনে উপস্থিত হয়। এই মুহূর্তে আফগানিস্তান এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ধর্মোন্মাদ তালিবানরা অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে আর যারা রক্ষাকর্তার ভেক ধরে শাসক হয়ে বসেছিল তারা ফেলে পালিয়ে গিয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। এখন সাধারণ আফগান ভাইবোনেরা নিজেদের মাতভমিকে রক্ষা করতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র। প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে পিশাচ তালিবানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সত্যি কি বাঁচার উপায় আছে! আফগানী সম্পদ লুটে খেতে হায়নার মতো তাকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রের দল তাদের লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে। ঘরে বাইরে শত্রুর কবলে কাবুল এখন পৃথিবীর কাছে চায় মানসিক শক্তি, মানবিক সমর্থন। আমরা কি এতই দৈন্য যে সেটাও দিতে কুন্ঠা বোধ করব।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

1,231FansLike
10FollowersFollow
4SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles