Monday, November 25, 2024
spot_img

নেতাজিকে নিয়ে মিথ্যাচার অব্যাহত

কে কন্যা, কার ছাই? প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন

ড. জয়ন্ত চৌধুরী

স্বনামে নেতাজির ভারত প্রত্যাবর্তন রুখতে নেহেরু আমলে সাজানো হয়েছিল স্ত্রী-পুত্র-কন্যার গল্প। এছাড়াও নানা সম্পত্তি আত্মসাত্ করতে নেতাজির চরিত্র হননের ঘৃণ্য পথে দেশবাসীর অগোচরে নানা কুকীর্তি করেছিল নেহেরু-প্যাটেল জুটি। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত নেতাজি ফাইলে স্পষ্ট  নেতাজির তথাকথিত স্ত্রী এমিলি কিংবা কন্যা আদৌ আইনগত কিংবা জিনগতভাবে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। অ্যানিটা পাফের জন্মের শংসাপত্রে, স্বরাষ্ট্র দফতরের গোপন রিপোর্টে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত। তবু বিস্ময়করভাবে কংগ্রেস আমলের মিথ্যাচারকে মান্যতা দিয়ে, নথিপত্রের প্রামান্য তথ্যকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর মোদীজির নেতাজির ১২৫ জন্মবর্ষের হাই পাওয়ার কমিটিতে বিদেশিনী অ্যানিটাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে নেতাজি কন্যা পরিচয়ে।

আড়াশো বছরের বেশি পুরনো নিশিচেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দিরে তাইওয়ানে সাজানো নেতাজির চিতাভষ্ম যা ইচিরের অকুরা নামে ২২ বছরের হৃদরোগে মৃত জাপানি সৈনিকের বলে জানা যায় (তার নামেই ডেথ সার্টিফিকেট)। সেটিকে একমাস পরে নেতাজির সফরসঙ্গী বলে কথিত হাবিবুর রহমান টোকিওর রেনকোজিতে নিয়ে আসেন। রেনকোজি মন্দিরটি ১৯৮৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিধ্বংসী আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়। যখন মুখার্জী কমিশন সেই মন্দিরে তদন্ত করতে যায় তখন কোনও ভষ্মাধার প্রদর্শনের লোক পাওয়া যায়নি। বলা হয় ছুটির দিন থাকায় মেকানিক নেই। পরবর্তীকালে ভষ্মাধারের জায়গায় রহস্যময়ভাবে চৌকোনো কাঠের বাক্সে আধপোড়া হাড়গোড়ের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভারতীয় দূতাবাস থেকে পাঠান পাঁচটি রঙিন ছবিতে স্পষ্ট ওই একই বাক্সে ব্রাউন পেপারে মোড়া কালো কালো কিছু ছাই। আইনগতভাবে কখনই ওই ছাইভষ্ম ডিএনএ টেস্ট যেমন করা উচিত নয় তেমনি ওই ভষ্ম থেকে হাড়গোড় হওয়া পদার্থগুলি থেকে ডিএনএ টেস্ট সম্ভব হলেও তা কখনই নেতাজির বলে প্রমাণ করা যাবে না। সঠিকভাবেই বিচারপতি মনোজ মুখার্জী ডিএনএ টেস্টের মতো বেআইনি পথে হাঁটেন নি। বিমান দুর্ঘটনা আদৌ সেদিন ঘটেনি এই মর্মে তাইওয়ানের প্রশাসন যেমন জানিয়েছে তেমনি অজস্র নথিপত্র গোয়েন্দা রিপোর্ট ঘেঁটে বিচারপতি সিদ্ধান্তে এসেছিলেন নেতাজি আদৌ তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট ও ২৩ জানুয়ারির প্রাক্কালে নেতাজির সঙ্গে সম্পর্কহীন অ্যানিটা পাফ ও এদেশের কিছু রাজনীতিক ধুয়ো তোলেন রেনকোজির ছাইভষ্ম ভারতে আনার জন্য। প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসু গোপনে তথাকথিত নেতাজির চিতাভষ্মের কিছু অংশ তাঁর বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন বলে তার বইতে লিখেছিলেন।  প্রকৃত সত্যকে আড়ালে করতে এত বছর বাদেও কংগ্রেস, বিজেপি, শিবসেনার মত দলগুলি কেন ছাই আনতে মরিয়া তা রহস্যজনক। সময় এসেছে অসম্পূর্ণ মুখার্জী কমিশন রিপোর্ট এই অজুহাতে একদা বাতিল করা কমিশনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিচারকদের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করার সাহস ও দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের। নেহেরু আমলের মিথ্যাচার জাতীয়তাবাদী দলের দাবিদার বিজেপি বহন করে নিয়ে চলেছে। কেন্দ্রে সরকার আসবে যাবে কিন্তু নেতাজির প্রতি অন্যায় অবিচারের কথাও লেখা হয়ে থাকবে ভারত ইতিহাসে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

1,231FansLike
10FollowersFollow
4SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles