Monday, November 25, 2024
spot_img

নাগরিকত্বের সুরাহা না হলে এই ভোট ব্যাঙ্ক হারাবে বিজেপি

কল্যাণ রায়চৌধুরী: রাজ্যে এবারের অর্থাত্ একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে রাজনৈতিক দলগুলির একাংশ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের থেকেও এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নাগরিকত্ব। মূলতঃ এই ইসু্যকেই সামনে রেখে মতুয়া ও উদ্বাস্তুরা এবারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে সমর্থনও করে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেন।
এপ্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক তথা শিক্ষক মহীতোষ বৈদ্য তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু এবং মতুয়াদের ভোট না থাকলে বিজেপির সমর্থন কার্যাত তলানিতে ঠেকবে। মতুয়াদের মূল দাবি ছিল নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদান। মূলতঃ এই দাবির পক্ষে মতুয়ারাই প্রথম আন্দোলন সঙ্ঘটিত করে। এবং দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই দাবিতে আন্দোলন করেছি। পরবর্তীতে অন্যান্য দলও আন্দোলন করেছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কেবলমাত্র নাগরিকত্বের জন্যে উদ্বাস্তু এবং মতুয়ারা বিজেপিকে দুহাত ভরে ভোট দিয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ৩টি আসন পায় এ রাজ্যে। কারণ এতদিন পর্যনন্ত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল না। সেখান থেকে এবার একলাফে ৭৭টি আসন পাওয়া সোজা কথা নয়। আসন প্রাপ্তিতে তণমূলের চেয়ে দৃশ্যতঃ কম পেলেও বিজেপির ভোট প্রাপ্তি ২ কোটি ২৭ লক্ষ, আর তণমূলের ২১৩টি আসন পেলেও মোট প্রাপ্তি ২ কোটি ৮০ লক্ষ। পার্থক্য খুব বেশি নয়। ফলে সেই অঙ্কটা হিসেব করে, আগামী দিনের জন্য জন্য বিষয়টা মাথায় রেখেই হয়তো কেন্দ্র সাবধানে পা ফেলছে। কারণ হিসেব করে দেখা যায়, এই মার্জিনের প্রায় ৮০ শতাংশ মোট উদ্বাস্তু ও মতুয়াদের। পশ্চিমবঙ্গের এই ভোট ব্যাঙ্ক ভারতীয় জনতা পার্টি হাতছাড়া করবে বলে মনে হয় না। নিঃশর্ত দাবির পাশাপাশি নূ্যনতম শর্তকেও আমরা মান্যতা দিচ্ছি। যেমন যাদের ভেগাটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি আছে, তাদের নাগরিকত্বের আওতায় আনা হোক। এবং তা অবিলম্বে। এমনকি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরকে নির্দিষ্ট সীমারেখা না করে এর পরেও বাংলাদেশের যে সমস্ত সংখ্যালঘুরা ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে এসেছেন, তাদেরকেও নাগরিকত্ব প্রদান করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক ভাবনাচিন্তার আবেদন জানাই। কারণ অবিভক্ত বাংলা ভাগ হবার কারণেই সে দেশের সংখ্যালঘুদের জীবনে এই বিপর্যরয় ঘটে গিয়েছে। এটা ভারত সরকারকেই দেখতে হবে। এবং তাদেরকেও নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের বিষয়টাকে সুরাহা না হলে, এবারের এই ভোট ব্যাঙ্কটাও তারা ধরে রাখতে পারবে না, রাজ্য জয় তো দূর অস্ত। মহীতোষ বৈদ্য আরও বলেন, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পরবর্তী যে হিংসা চলছে রাজ্য জুড়ে, তাতে মতুয়া ও উদ্বাস্তু সহ নিম্নবর্ণের মানুষরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তথাপি তারা দাঁতে দাঁত চেপে রয়েছে শুধুমাত্র নাগরিকত্বের জন্যে। আমাদের কাছে এখনও পর্যঙন্ত যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৯৭১ সালেও মতুয়ারা এত মার খায়নি বা এত অত্যাচারিত হয়নি।
সম্প্রতি বাংলার চারজন বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রিয় প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন বনগাঁর সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। এ প্রসঙ্গে মহীতোষবাবু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে এই প্রথম একজন কেন্দ্রিয় মন্ত্রী হলেন, এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। কিন্তু যে মন্ত্রক তাকে দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে মতুয়াদের কি উপকার হবে, তা আমার জানা নেই। মতুয়াদের যেটা জ্বলন্ত সমস্যা, সেটা হল নাগরিকত্ব। আমরা অমিত শাহর সঙ্গে দেকা করে তার কাছে উদ্বাস্তু মন্ত্রক চেয়েছিলাম। আমরা দেখলাম যে এই মন্ত্রীসভায় নতুন মন্ত্রক সৃষ্টি করা হয়েছে। তা হল, কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এরকমভাবেই উদ্বাস্তু বিষয়ক একটা মন্ত্রক পৃথকভাবে তৈরি করা হোক। যেমন আরও উদ্বাস্তু পুনর্গঠন বলে একটা মন্ত্রক ছিল। তেমনটা হলে শান্তনু ঠাকুর তাদের জন্য কাজ করতে পারতেন। সঙ্গে আমরাও কাজ করতে পারতাম। কিন্তু তার বদলে যে মন্ত্রক তাকে দেওয়া হল, তা মাথায় পালকের মতো শোভাবর্ধন করা ছাড়া আর কিছুই নয়। শান্তনুবাবুতো মতুয়া জনসমাজের একজন প্রতিনিধি। ফলে তাকে এহেন মন্ত্রক দিয়ে একপ্রকার কোনঠাসা করে দেওয়া হল, বলে আমি মনে করি। সর্বোপরি বিষয়টা হল নাগরিকত্ব। সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আনন্দের পাশাপাশি শংসয়ের দোলাচলও রয়েছে মতুয়া জনমানসে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

1,231FansLike
10FollowersFollow
4SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles