Wednesday, July 3, 2024
spot_img

করোনা ভয়ে কাঁটা আদালত চত্বর, কাল বিলম্বে দুর্ভোগ বাড়ছে বিচারপ্রার্থীদের

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত দেড় বছর ধরে করোনার ভয়ে জড়োসড়ো আদালত চত্বর। তালা বন্ধ সাজানো এজলাস। বিচারক থেকে কর্মী সকলেই ঘরবন্দী। মাঝে মধ্যে দু-একজন এসে অতি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ছুটছেন বাড়ির দিকে। মাস মাহিনা নিয়মিত পেঁছে যাচ্ছে স্যালারি অ্যাকাউন্টে। উকিল বাবুরাও অগত্যা বাড়িতে কাল কাটাচ্ছেন নয়তো ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন এদিক ওদিক। শুধুমাত্র চটজলদি কিছু ক্রিমিনাল কেসের বিচার চলছে চাহিদার অনুপাতে। ফলে ক্রমশই অবসন্ন আদালতে একের পর এক নিষ্ফলা ডেট পড়ছে বিচারাধীন মামলাগুলোর। অন্যদিকে বাদী-বিবাদী যারা জীবনের নানা সমস্যা মেটাতে আদালতে এসেছিলেন বিচারের আশায় তারা দিনের পর দিন সয়ে চলেছেন যন্ত্রণা।
এক হিসাব বলছে রাজ্যের ৬৭টি আদালতে গড়ে ১৫টি করে মামলা হলে প্রতিদিন মামলা সংখ্যা ছিল হাজার খানেকের সামান্য বেশি। এই সংখ্যায় প্রতিদিন মামলা জমতে থাকলে করোনা কালে বকেয়া মামলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। এমনিতেই নানা টালবাহানায় আদালতগুলির জমে থাকা মামলা সরকারের মাথা ব্যথার কারণ। মাঝে মাঝেই লোক আদালত, ফার্স্ট ট্র্যাকক কোর্ট গঠন করে জমে থাকা মামলার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা হয় সরকারের তরফে। তাতেও বকেয়া মামলার সংখ্যায় তেমন হেরফের হয় না। তার উপর করোনার জেরে যে মামলা জমল তার নিষ্পত্তি বিচারপ্রার্থীদের জীবনে হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এমনিতেই বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা-এর মতো আদালত ছুঁলে একুশ ঘা। খুব কম দেওয়ানী মামলাই বিচারক আর উকিলবাবুদের কল্যাণে পনেরো-কুড়ি বছরের আগে শেষ হয়। এরপর এই মামলার পাহাড় ডিঙিয়ে কবে বিচার মিলবে তা ভেবে আকুল এ রাজ্যের বাসিন্দারা। অবিলম্বে রাজ্য সরকার ও আদালত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বকেয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে বিচার ব্যবস্থাটাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রহসনে পরিণত হবে।বিভিন্ন আইনজীবীদের মতে এই পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কোর্টের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মানুষের। যেমন স্ট্যাম্প পেপার বিক্রেতাদের, মুহুরিদের এবং আরও অন্যান্য যারা এই আইন ব্যবসার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে নিজেদের সংসার চালাতেন। প্রায় সময়ই অভিযোগ ওঠে, আইনজীবীদের দ্বিচারিতা এবং মামলার জন্য বেশি পরিমানে টাকা নেওয়ার। এই অভিযোগের উত্তরে আইনজীবীরা জানান কোর্ট অফিসিয়ালদের জন্য সরকারিভাবে বহু প্রকল্প থাকলেও উকিলবাবুদের জন্য তেমন কোনও প্রকল্প নেই। আবার এই পরিস্থিতিতে কোর্ট কর্তপক্ষ না এলেও মাইনে পেয়ে যাচ্ছেন কিন্তু উকিলদের ক্ষেত্রে তা নয়। ফলে মুহুরি, জুনিয়র এবং অন্যান্য কর্মীদের সংসার চালানোর দায় কিন্তু বর্তায় সিনিয়র আইনজীবীদের ওপর। ফলে গ্রাহকদের কাছ থেকে পয়সা নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় নেই। এই বিষয়ে আলিপুর কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, উকিলদের জন্য একটি ওয়েল ফেয়ার ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। এই ফান্ডের টাকা আসে স্ট্যাম্প বিক্রি করে। বার কাউন্সিল বার অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে এই স্ট্যাম্প বিক্রি করে যা তারা কেনে সরকারের কাছ থেকে। সব কোর্টেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। ওকালতনামা জমা দেওয়ার সময় এই দশ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পটি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই স্ট্যাম্প কেনার কোনও অডিট বা হিসাব রাখা হয় না। তাই ওই ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে কোনও উকিলই সাহায্য পান না। এহেন অবস্থায় এই পরিস্থিতিতে মানুষ যে কোর্টের ওপর ভরসা করবে তাও এখন অনেক সন্দেহের ব্যাপার। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন কোর্টে অনলাইনের ব্যবস্থা থাকলেও তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জানালেন কয়েকজন আইনজীবী। করোনা না আসলে হয়তো এত কিছু ধরাই পড়তো না।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু আইনজীবীর অনৈতিক কাজকর্মের ফলে মানুষ এখন সব কিছুই টাকা পয়সা দিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এ ভাবেই বেড়ে চলেছে ভ্রষ্টাচার। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মানুষ আর গণতান্ত্রিক আইনকে সম্মান করবে না এবং কোর্টেরও আর প্রয়োজন পড়বে না।
বিচার চলাকালীন কাল বিলম্বের আরও একটা কারণ হলো যখন তখন বিচারক বদলী। এক জন জজ একটি মামলার শুনানি শেষ করার আগেই বদলি হয়ে যাচ্ছেন। পরে আবার নতুন জজ এসে প্রথম থেকে একই মামলার শুনানী শুরু করছেন, বুঝতেও সময় নিচ্ছেন বেশ কিছু দিন। এমন ভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর, কেস যারা করেন সেই উভয় পক্ষের বংশ পরম্পরায় একটি কেস চলতে থাকে।
এমন হাস্যকর বিচার ব্যবস্থা বহাল থাকলে দেশে বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা যেমন কমতে থাকবে তেমনই বাড়তে থাকবে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা। ফলে এখনই এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

1,231FansLike
10FollowersFollow
4SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles