কুনাল মালিক – আষাঢ়-শ্রাবণ মাস পড়লেই বাংলার কৃষি মুখর চিত্র জ্বলজ্বল করত। মাঠে মাঠে বীজতলা বপন-রোপন, লাঙল ও ট্র্যাকটর নিয়ে কৃষক-জন মজুরদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আমন ধানের বীজতলা ফেলা হতো। আর অম্বুবাচীর পর শুরু হতো বীজতলা রোপন। কিছু দিনের মধ্যে সারা মাঠ জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। কিন্তু বিগত ৫ বছর ধরে আষাঢ়ের এই চেনা ছবি আর চোখে পড়ছে না। বিঘের পর বিঘে জমিতে এখন শুধু হোগলা আর পাতির জঙ্গল। মানুষের আর যেন ধান চাষে মন নেই। কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তরে বজবজ-২ নম্বর ব্লকের হাউড়ী গ্রামের কৃষক নেপাল ভৌমিক জানালেন, দেখুন এখন চাষ না হওয়ার কারণ অনেক, প্রথমত, শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সকলে এখন ১০০ দিনের কাজ করতে ব্যস্ত। সামান্য শ্রম দিয়েই প্রায় দুশ টাকা ইনকাম। দ্বিতীয়ত, সারের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারের উচিত প্রকৃত কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্যের সারের দোকান করা। তাছাড়া যাদের জমি আছে তারা রাজ্য সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে বছরে দশ হাজার আর কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি সম্মান নিধি প্রকল্পে বছরে ছয় হাজার টাকা নিতে ব্যস্ত। চাষের হ্যাপা আর কেই বা নিতে চায়।
আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিনামূল্যের রেশনে পাওয়া চাল গম মানুষ না খেয়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অথচ যদি প্রকৃত দুঃস্থ মানুষরা এই বিনামূল্যে চাল-গম পেত তাহলে খাদ্যের এত অপচয় হতো না।
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, অধিকাংশ মানুষ শুধু কোন খাতে টাকা পাওয়া যায় সেটা জানতেই বেশি উদ্গ্রীব। কেউ এসে বলে না- চাষ করব ভাল জাতের বীজধান দিন।
আরও একটা বিষয় জানা যাচ্ছে যাদের জমি নেই অর্থাত্ ভাগ চাষি অন্যের জমি নিয়ে চাষ করে তারা সব দিকেই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এদের কথাও সরকারের চিন্তা করা উচিত। বজবজ-২ নম্বর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা ডাঃ শান্তনু পাল বলেন, দেখুন ভাগ চাষিরা যদি এক লপ্তে চাষ করতে চান ওরা যোগাযোগ করলে কৃষি উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও চাষে অনীহা বেড়েছে কারন এখন আষাঢ় মাসের প্রথমেই এত বৃষ্টি হচ্ছে যে, জমিতে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, যদি দিন দিন ধান চাষ কমতে থাকে তাহলে একদিন খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই ধান চাষে উত্সাহ দিতে কৃষকদের সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।